দেহঘড়ি

ঘাড় ব্যথা কেন হয়, চিকিৎসা ও করণীয়

‘ঘাড় ব্যথা’ খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। আধুনিক জীবন যাত্রার ব্যস্ততা, অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার ব্যবহার, দীর্ঘ সময় সামনে ঝুঁকে মোবাইল ব্যবহার, সঠিক ভঙ্গিতে না বসা এবং মানসিক চাপ কিংবা বয়সজনিত কারণে অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন। প্রথমে এটি সাময়িক অস্বস্তি মনে হলেও সময় মত চিকিৎসা না নিলে দীর্ঘস্থায়ী জটিলতায় রূপ নিতে পারে। সঠিক জীবনধারা, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও নিয়মিত ব্যায়াম ঘাড়ের ব্যথা নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ঘাড় ব্যথার কারণ ১. সঠিক ভঙ্গিতে না বসা এবং দীর্ঘ সময় একই অবস্থানে বসে কম্পিউটার ও মোবাইল ব্যবহার করা ২. অতিরিক্ত ঝুঁকে কাজ করা বা ভারী জিনিস তোলা ৩. ঘাড়ের মাংসপেশির টান অথবা দুর্বলতা  ৪. খেলাধুলা বা দুর্ঘটনা জনিত আঘাত  ৫. দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভ করা বা স্থির ভঙ্গিতে থাকা  ৬. উঁচু বা শক্ত বালিশে ঘুমানো  ৭. স্ট্রেস ও টেনশন  ৮. সারভাইকাল স্পন্ডাইলোসিস-ডিস্ক এর ক্ষয় ও দুটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্পেস সংকুচিত হওয়া  ৯. ডিস্ক হার্নিয়েশন  ১০. সংক্রমণ -মেনিনজাইটিস, টিউবারকুলোসিস  ১১. টিউমার বা ক্যান্সার- ঘাড়ের হাড় ও মাংসপেশির অংশে হলে ১২. হৃদরোগ-হৃদরোগজনিত কারণেও ব্যথা ঘাড়ের দিকে আসে

ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধে আপনি কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চলতে পারেন। যে অভ্যাসগুলো আপনার ঘাড়ের পেশীগুলোকে সুস্থ রাখতে এবং ব্যথা এড়াতে সাহায্য করবে।

সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখুন বসা, দাঁড়ানো কিংবা হাঁটার সময় ঘাড় ও মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। ঝুঁকে কাজ করার অভ্যাস পরিহার করুন।  একটানা বসে থাকবেন না প্রতি ৩০–৪০ মিনিট অন্তর উঠে হাঁটুন বা হালকা স্ট্রেচ করুন। দীর্ঘক্ষণ এক ভঙ্গিতে বসা ঘাড়ের জন্য ক্ষতিকর। 

কম্পিউটার ও মোবাইলের অবস্থান ঠিক করুন স্ক্রিন সবসময় চোখের সমতলে রাখুন। মোবাইল ব্যবহারকালে নিচে ঝুঁকে না দেখে সামনে তুলে ধরুন। 

বেশি উঁচু বালিশ পরিহার করুন

একটিমাত্র মাঝারি উচ্চতার বালিশ ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত উঁচু বা শক্ত বালিশ ঘাড়ের জন্য ক্ষতিকর।

গরম বা ঠান্ডা সেঁক দিন আঘাতজনিত কারণে ব্যথা হলে প্রথম ২৪ ঘণ্টা বরফ সেঁক দিবেন ১০-১৫ মিনিট করে দিনে ২থেকে ৩ বার। দীর্ঘদিনের ব্যথা হলে সহনীয় মাত্রায় গরম সেঁক দিবেন ১০ -১৫ মিনিট দিনে ২ বার। গরম বা ঠান্ডা কোনটাই ত্বকে সরাসরি দিবেন না এক্ষেত্রে পাতলা কাপড় পেঁচিয়ে নিবেন।

ভারী জিনিস বহন এড়িয়ে চলুন এক কাঁধে ব্যাগ বা ভারী জিনিস বহন না করে দুই কাঁধে সমানভাবে ভাগ করে নেবেন। 

পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন প্রতিদিন ৬–৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন ।

স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখুন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন যা মানসিক চাপ কমিয়ে ঘাড়ের পেশির টান দূর করতে সাহায্য করে। ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় ও হাতের দিকে আসে, হাতে অবশভাব, দুর্বলতা বা মাথা ব্যথা দেখা দেয়; তবে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন ১. ঘাড় ডানে-বামে ঘোরানো: ধীরে ধীরে ঘাড় ডানদিকে ঘোরান, যেন কাঁধের ওপর দিয়ে তাকাচ্ছেন। এবার ধীরে বামদিকে একইভাবে ঘোরান। ১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন। 

২. ঘাড় পাশের দিকে ঝুঁকানো: মাথা ধীরে ডান কাঁধের দিকে ঝুঁকিয়ে কান কাঁধে ছোঁয়ানোর চেষ্টা করুন। এবার ধীরে বাম কাঁধের দিকে ঝুঁকান। এভাবে উভয় দিকে ১০ বার করে করুন। 

৩.কাঁধ উঠানো ও নামানো: দুই কাঁধ একসাথে কানের দিকে তুলুন। তারপর ধীরে নামিয়ে আনুন। ১০–১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

লেখক: ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপি -বিপিটি,( ঢাবি,পঙ্গু হাসপাতাল ঢাকা) মাস্টার্স অব ফিজিওথেরাপি- এমপিটি , ফেলো (ঢাবি, সিআরপি) এমপিএইচ (ঢাকা) পোস্ট গ্রাজুয়েশন সার্টিফিকেট ইন মেডিকেল আকুপাংচার (ইন্ডিয়া)। বোবাথ বেসিক কোর্স ( ইংল্যান্ড) এমডিটি পার্ট এ এন্ড বি (ম্যাকেঞ্জি ইনস্টিটিউট নিউজিল্যান্ড) কনসালটেন্ট (ফিজিওথেরাপি) প্রিমিয়ার ফিজিওথেরাপি কনসালটেশনএন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, আদাবর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা ১২০৭।