খেলাধুলা

‘জাহানারার অভিযোগ ভিত্তিহীন, কল্পিত এবং সত্যতার কোনো অংশে মিল নেই’

বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের ক্রিকেটার জাহানারা আলম অস্ট্রেলিয়াতে থিতু হয়েছেন। সিডনিতে খেলার পাশাপাশি কোচিংয়েও হাত পাকাচ্ছেন। এরই মধ্যে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে লেভেল ২ কোচিং কোর্স সম্পন্ন করেছেন। যা নিঃসন্দেহে নারী ক্রিকেটের জন্য বিরাট খবর। 

কিন্তু হঠ্যাৎ তাকে নিয়ে আলোচনার কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেট। সম্প্রতি দৈনিক কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির বিরুদ্ধে দলে আধিপত্য বিস্তার, সিন্ডিকেট তৈরি, ক্রিকেটারদের মারধর করা, জুনিয়র ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ করেছেন। ড্রেসিং রুমে ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করছে এবং নানা শঙ্কায় অনেকে মুখ খুলতে পারছেন না বলেও দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে তাকে পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া এবং তীর্যক মন্তব্য ও অভিযোগ করেছেন নির্বাচক, অধিনায়ক, স্টাফদের নিয়ে।

তার দেওয়া সাক্ষাৎকার নজরে এসেছে বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। যা কোনোভাবেই ভালোভাবে নেয়নি বিসিবি। জাহানারার বক্তব্য প্রত্যাহার করে বিসিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জাহানারার সব অভিযোগ ভিত্তিহীন, কল্পিত এবং সত্যতার কোনো অংশে মিল নেই। বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নারী দল যখন আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসনীয় অগ্রগতি এবং একতার পরিচয় দিচ্ছে, তখন এমন হানিকর মন্তব্য করা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ক্রিকেট বোর্ডের মতে, এই মন্তব্যগুলো সময়োপযোগী নয়, সুপরিকল্পিত এবং বোঝা যায় যে এর উদ্দেশ্য নারী দলের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস ক্ষুণ্ন করা। বিসিবি উল্লেখ করেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিকল্পনা ও কার্যক্রমে যে ব্যক্তি অংশগ্রহণ করছে না, তিনি জনসমক্ষে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেওয়া অবাঞ্চিত এবং দুঃখজনক।

ওই সাক্ষাৎকারে জাহানারা বলেছেন, “যদি মনে করে কাউকে ‘সাইজ’ করতে হবে, তখন জ্যোতির সঙ্গে আলোচনা করে। জ্যোতির আবার আলাদা একটি গ্রুপ। ওর সঙ্গে আছে পিংকি (ফারজানা হক) ও ইশমা (তানজিম)। রাবেয়া ওর ডান হাত। এখন সুমাইয়াও যোগ হয়েছে। এই হচ্ছে জ্যোতির প্যানেল। এরা যে কী করতে পারে, আপনার কোনো ধারণাই নেই। পুরো ক্রিকেটটাকে এরা ধ্বংস করে দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর পরিবেশটা ওরা রাখছে না। ‘’

তিনি আরো বলেছেন, ‘‘সিলেটে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের ফিটনেস সেশন করার পর কেউ যখন ঠিকমতো হাঁটতেও পারছে না, তখন দেখি এক জুনিয়র জ্যোতির কিটব্যাগ টেনে এক মাঠ থেকে আরেক মাঠে নিচ্ছে। জুনিয়ররাই সব সময় ওর কিটব্যাগ টানে। কতবার যে জ্যোতিকে বলতে শুনেছি, ‘এই বসে আছিস কেন? যা আমার ব্যাগ নামা।’ জুনিয়ররা আসলে করতে বাধ্য, কিছু করার নেই। সিলেটেরই আরেকটি ঘটনা বলি। দুটি ড্রেসিংরুমের একটি জুনিয়রদের জন্য বরাদ্দ। জ্যোতিকে দেখলাম, ওটায় গিয়ে জুনিয়রদের দিয়ে মাথা টেপাচ্ছে, চুলে তেল দেওয়াচ্ছে।’’

নির্বাচকদের নিয়ে জাহানারার দাবি, ‘‘বাংলাদেশ গেমসের ফাইনালের পর থেকে শুরু হয় আমার সঙ্গে মঞ্জু ভাইয়ের (নারী দলের সাবেক নির্বাচক ও ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম) দুর্ব্যবহার, অপমান ও টিজিং। তখন থেকে মঞ্জু ভাই ও তৌহিদ ভাই (বিসিবির নারী ক্রিকেট বিভাগের সাবেক ইনচার্জ প্রয়াত তৌহিদুর রহমান) আমার ফোন ধরতেন না। উনারা দুজন আমাকে নিয়মিত অপমান করতে শুরু করেন। তাঁরা চাইছিলেন আমি যেন হারিয়ে যাই। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ওভাবেই চলছিল। বিকেএসপিতে দল নির্বাচনের অনুশীলন ম্যাচে গিয়ে দেখি আমার সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ। পরে জানতে পারি, মঞ্জু ভাই ও তৌহিদ ভাইয়ের সরাসরি নির্দেশনা ছিল আমাকে কিছু না দেওয়ার। যে সফরে বাদ পড়লাম, তার আগে থেকে জ্যোতিও আমার সঙ্গে কথা বলে না।’’

বিসিবি সরাসরি এমন বিষয় প্রত্যাখ্যান করেছে, ‘‘বিসিবি স্পষ্ট করতে চায়, নারী জাতীয় দলের নেতৃত্ব, খেলোয়াড় ও ব্যবস্থাপনায় বোর্ডের পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। বোর্ড কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি যা এই দাবিগুলোর সমর্থন করে। দল ও এর কর্মীদের পেছনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত জাহানারার করা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং বোর্ড দৃঢ়ভাবে দলের পক্ষেই রয়েছে।’’