হালদা নদীকে ‘মৎস্য হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বুধবার (৫ নভেম্বর) প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে রুইজাতীয় মাছের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতকরণ এবং গাঙ্গেয় ডলফিনের আবাসস্থল সংরক্ষণের লক্ষ্যে— খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় ও মানিকছড়ি উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী উপজেলা এবং পাঁচলাইশ থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী ও নদীতীরবর্তী মোট ৯৩ হাজার ৬১২টি দাগের ২৩ হাজার ৪২২ একর এলাকা ‘হালদা নদী মৎস্য হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করা হলো।
এপ্রিল থেকে জুন মাসে হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে রুইজাতীয় মাছের প্রজননের ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিষিক্ত ডিম পাওয়া যায়— উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, গেজেট প্রকাশের দিন থেকে কয়েকটি শর্ত কার্যকর হবে। এই নদী থেকে কোনো প্রকার মাছ বা জলজ প্রাণী ধরা বা শিকার করা যাবে না। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ে মাছের নিষিক্ত ডিম আহরণ করা যাবে।
প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী কোনো কার্যকলাপ করা যাবে না। ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন করতে পারে— এমন কোনো কাজও করা যাবে না। মাছ, ডলফিন ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর কোনো কার্যকলাপ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
নদীর চারপাশের বসতবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পয়ঃপ্রণালীর বর্জ্য বা তরল বর্জ্য নদীতে ফেলা যাবে না। কোনো অবস্থাতেই নদীর বাঁক কেটে সোজা করা নিষিদ্ধ থাকবে।
হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১৭টি খালে প্রজনন মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি–জুলাই) মৎস্য আহরণ করা যাবে না। হালদা নদী ও এর সংযোগ খালের ওপর নতুন করে কোনো রাবার ড্যাম বা কংক্রিট ড্যাম নির্মাণ করা যাবে না।
‘হালদা নদী মৎস্য হেরিটেজ তদারকি কমিটি’র অনুমতি ছাড়া নদীতে নতুন পানি শোধনাগার বা সেচ প্রকল্প স্থাপন করে পানি উত্তোলন করা যাবে না।
একইভাবে, পানি ও মৎস্যসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর গবেষণার ক্ষেত্রেও কমিটির অনুমতি ব্যতীত কোনো দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি হালদা নদীতে গবেষণা পরিচালনা করতে পারবে না।
মাছের প্রাক-প্রজনন পরিভ্রমণ সচল রাখার স্বার্থে হালদা নদী ও এর সংযোগ খালের পানির প্রবাহে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
সারা বছর কর্ণফুলী মোহনা থেকে নাজিরহাট ব্রিজ পর্যন্ত (অভয়াশ্রম এলাকা) ইঞ্জিনচালিত ভারী নৌযান— যেমন বালুবাহী ও পণ্যবাহী নৌকা এবং ড্রেজার— চলাচল করতে পারবে না।
হালদা ও তার শাখা নদীর বালুমহাল ইজারা বন্ধ থাকবে এবং ড্রেজার দিয়ে বা ক্ষতিকর পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।
নদীর অববাহিকা অঞ্চলে কোনো প্রকার তামাক চাষ করা যাবে না। কৃষিজমিতে ক্ষতিকর কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার করা যাবে না। নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকায় কোনো ব্রিকফিল্ড স্থাপনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, উন্নততর পরিবেশগত ও প্রতিবেশগত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে এলাকার সীমা-পরিসীমা নির্ধারণসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সময়ে সময়ে বিধিনিষেধ আরোপসহ প্রজ্ঞাপনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবে।