মীরাবাই যখন মাত্র চার বছর বয়সে এক বিবাহ শোভাযাত্রা দেখছিলেন, তখন তিনি তার মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘মা, আমার বর কে হবে ?’’ মীরাবাইয়ের মা হেসে শ্রী কৃষ্ণের প্রতিমূর্তিটির দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘‘মীরাবাই, শ্রী কৃষ্ণ তোমার বর হতে চলেছেন’’। তারপর থেকে, তিনি কৃষ্ণের প্রতি গভীর ভক্তি প্রকাশ করেছিলেন।
মীরাবাই ৫ থেকে ৭ বছর বয়সে তার মাকে হারান। এরপর মুঘল বাদশাহ আকবরের বিরুদ্ধে রাজ্য রক্ষার যুদ্ধে তিনি তার বাবা রত্নসিংহকে হারান। মীরা বড় হতে থাকেন দাদা রাও দুদাজির কাছে।
কিংবদন্তি আছে, কৃষ্ণের মূর্তি নিয়ে খেলতে খেলতে মীরার মধ্যে কল্পনা বিকশিত হয়। ধীরে ধীরে তিনি কবি হয়ে ওঠেন। ক্রমশ মীরার অবিচ্ছেদ্য সংযোগ গড়ে ওঠে কৃষ্ণের মূর্তির সঙ্গে। মীরা নিজেকে কৃষ্ণের সঙ্গিনী বলে ভাবতে শুরু করেন। ১৫১৬-তে মীরার বিবাহ সম্পন্ন হয় রাম সঙ্গ-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র, মেওয়ারের রাজা ভোজের সঙ্গে। পতিগৃহে পৌঁছে আপ্রাণ চেষ্টা করছে মানিয়ে নেওয়ার। কিন্তু তথাকথিত নারীসুলভ সাংসারিক কাজে তার মন ছিলো না। থাকবেই বা কী করে? মুখে মুখে প্রেমের কবিতা তৈরি করতেন। একতারা হাতে নিজের গানে সুর দিতেন। বিবাহিত সঙ্গীর প্রতি যথেষ্ট অনুরাগ তিনি বোধ করতেন না। রাতবিরাতে বেরিয়ে পড়তেন ধারেকাছের মন্দিরে। শ্রী কৃষ্ণের সঙ্গে এ-ই তার অভিসারবেলা। তবে স্বামীর প্রতিও তার শ্রদ্ধা ছিলো। মীরাবাইয়ের স্বামী ভোজরাজ যুদ্ধে প্রাণ হারান। অকাল বৈধব্য মীরাকে গভীর বৈরাগ্য এনে দেয়।
১৫২১-এ যুদ্ধে ভোজরাজের মৃত্যু ঘটে। নতুন রাজা ক্ষমতায় এসে মীরাবাইয়ের গতিবিধি নানা ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং হত্যার ষড়যন্ত্র করে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করেন মীরাবাই।
মীরা প্রথমে বৃন্দাবনে ঠাঁই নেন৷ তারপর চলে যান দ্বারকায়। ১৫৪৭-এ দ্বারকাতেই মীরাবাইয়ের মৃত্যু হয়। মীরাবাইয়ের লেখা গান আজও প্রেমিক হৃদয়ে দোলা দেয়।
এখনও কোথাও কোথাও বেজে ওঠে ‘‘ম্যায় তো নারায়ণ কি আপহি হো গয়ি দাসী রে॥
লোগ কহে মীরা ভই বাবরি ন্যাত কহৈ কুলনাশী রে।’’
সূত্র: উইজডম অবলম্বনে