ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। তাই সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। কেউ যদি সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্রুত সেবার ক্ষেত্রে সবার আগে জনগণ।”
সোমবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অডিটরিয়ামে ‘উপজেলা ভূমি অফিসের সেবা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “ভূমি প্রশাসন বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত, যার কার্যক্রম মূলত উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সাধারণ মানুষের ভূমি-সংক্রান্ত প্রায় সব সেবা এখান থেকেই দেওয়া হয়। তাই উপজেলা ভূমি অফিস নাগরিক সেবার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।”
তিনি আরো বলেন, “ভূমি সেবার মান ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এখনও নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সেবায় জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কিভাবে কাজ করলে জনগণের কল্যাণ হবে, তা নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নির্ধারণ করতে হবে।”
সুশাসন ছাড়া অগ্রগতি অসম্ভব ভূমি উপদেষ্টা বলেন, “সুশাসন একটি রাষ্ট্রের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। এটি এমন একটি কাঠামো, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়—ভূমি সেবার ক্ষেত্রেও তাই।”
তিনি বলেন, “ভূমি মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এটি খাদ্য, শিল্প, আবাসন ও অর্থনীতির মূল উৎস। ভূমি সেবার মানোন্নয়ন কেবল প্রযুক্তিনির্ভর নয়, এটি মানবিকতা, সততা ও দায়িত্ববোধের সমন্বয়।”
জনবান্ধব ভূমি প্রশাসনের আহ্বান ভূমি উপদেষ্টা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “স্বচ্ছতা, দেশপ্রেম, সততা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে ভূমি খাতকে জনবান্ধব করা সম্ভব। সহকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে, অসততার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”
তিনি বলেন, “অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কাজের জন্য ওপর থেকে সুপারিশ এলে দ্রুত হয়ে যায়, কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই দ্রুত সেবা পায় না। এসব অসঙ্গতি পরিহার করতে হবে।”
ভূমি খাতে সুশাসন এখন সময়ের দাবি আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “ভূমি খাত বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। এটি শুধু উৎপাদনের উপকরণ নয়; এটি নাগরিকের অধিকার, জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ভূমি প্রশাসনে সুশাসনের অভাব ও স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে জনগণ ভোগান্তিতে ছিল।”
নতুন বাংলাদেশের পথে ভূমি উপদেষ্টা আরো বলেন, “সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বই পালন করেন না, বরং নির্বাচন পরিচালনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁরা নির্বাচনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।”
তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশকে পুরোনো জীর্ণতা ভুলে সামনে এগোতে হবে। সামনে নির্বাচন—নতুন আশা ও নতুন প্রত্যয়ের প্রতীক। তাই এমন একটি নির্বাচন উপহার দিতে হবে, যেখানে জনগণ নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ।স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন টিআইবির পরিচালক (সিভিক এনগেজমেন্ট) ফারহানা ফেরদৌস, প্রফেসর ড. সুরাইয়া খায়ের, উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা), টিআইবি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী প্রমুখ।