সারা বাংলা

মানুষ আর শিয়ালের বন্ধুত্ব

মানুষ ও বন্য প্রাণীর সম্পর্ক সাধারণত ভয়ের বাঁধনে আবদ্ধ। তবে, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সূর্যনারায়ণপুরে শিয়াল ও মানুষের মধ্যে গড়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী ভালোবাসার গল্প। এই গ্রামের কাওলারটেক এলাকার এক কৃষকের সঙ্গে শিয়ালের বন্ধুত্ব সবাইকে অবাক করেছে। কৃষক গিয়াস উদ্দিন ভালোবেসে এই প্রাণীটির নাম রেখেছেন ‘লালু’। তিনি যেখানেই যান লালু তাকে অনুসরণ করে।

কৃষক গিয়াস উদ্দিন স্ত্রী-সন্তানদের থেকে আলাদা নিরিবিলি পরিবেশে বসবাস করেন। বাড়ির উঠানে গরু, ছাগল, মুরগি, ভেড়া—সব রয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কাছের সঙ্গী এখন লালু। প্রায় এক বছর আগে বন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া শিয়ালের ছানাটিকে গিয়াস উদ্দিন নিজের কাছে রেখে লালনপালন শুরু করেন। তাকে পরিবারের সদস্যদের মতোই আগলে রাখছেন তিনি।

এখন লালুর বয়স এক বছরের বেশি। খাবার হিসেবে ভাত, তরকারি, মাংস, পাউরুটি ও বিস্কুট খায় লালু। দিনের বেশির ভাগ সময় সে থাকে গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির উঠানে কিংবা ঘরের ভেতরে। মাঝে মধ্যে বনে গেলেও গিয়াস উদ্দিন ডাক দিলেই ফিরে আসে।

গিয়াস উদ্দিন বলেন, “ছোটবেলা থেকেই আমি প্রাণীদের ভালোবাসি। লালুকে যখন পাই, তখন ওর চোখ ফোটেনি। ধীরে ধীরে তাকে বড় করেছি। এখন মনে হয়, লালু আমার সঙ্গী—যেখানেই যাই, সে আমার পেছনেই থাকে।”

প্রতিবেশী আজিজুল হক বলেন, “মানুষের এত কাছাকাছি শিয়াল থাকবে—এটা দেখলে অবাক হতে হয়। শিয়ালটি গিয়াস উদ্দিনকে বিশ্বাস করে, তা দেখলেই বোঝা যায়।”

তবে, এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতার কথা রয়েছে। কাপাসিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, “শিয়াল রেবিস ভাইরাস বহন করতে পারে। যা জলাতঙ্কের মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই এমন প্রাণীর সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কারণ হতে পারে।  বন্যপ্রাণী রক্ষার দিক থেকেও বিষয়টি বন বিভাগকে পর্যালোচনা করা উচিত।”

গিয়াস উদ্দিনের উঠানে লালুর নির্ভার খেলা দেখলে সহজেই মনে হয়, প্রকৃতি মাঝে মাঝে মানুষের কাছে এমন গল্প রেখে যায়, যেগুলো বইয়ের পাতায় নয়, মাটির গন্ধে, স্নিগ্ধ স্নেহে রচিত হয়।