আন্তর্জাতিক

সাবমেরিন ইস্যুতে আটকে গেল দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের চুক্তি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে পৌঁছানোর ঘোষণা দেওয়ার দুই সপ্তাহ পরও, উভয় পক্ষ এখনো কাগজে-কলমে কোনো চুক্তি প্রকাশ করেনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির অনুমতি নিয়ে আলোচনা চলায় চুক্তির কাগজপত্র প্রকাশে দেরি হচ্ছে। 

মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মিয়ং গত মাসে সিউলে অনুষ্ঠিত এশিয়া–প্যাসিফিক ফোরামের ফাঁকে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সাবমেরিন ইস্যুটি প্রকাশ্যে তুলেছিলেন। সেই বৈঠকের পর কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, সাবমেরিনসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তির রূপরেখাসহ একটি যৌথ তথ্যপত্র শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। সেইসাথে জুলাই মাসে প্রথম ট্রাম্প-লি শীর্ষ সম্মেলনে ঘোষিত বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখাও প্রকাশ করা হবে, যার অধীনে দক্ষিণ কোরিয়া কম শুল্কের বিনিময়ে মার্কিন প্রকল্পগুলোতে শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আহন রবিবার স্থানীয় সম্প্রচারক কেবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার পর থেকে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের তাদের মতামত সমন্বয় করার জন্য কিছুটা সময় লাগছে বলে মনে হচ্ছে।”

দক্ষিণ কোরিয়ার এক জ্যেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট সহকারী শুক্রবার জানান, ওয়াশিংটন পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারে সিউলকে নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট মার্কিন বিভাগগুলো এখনও মতামত দিচ্ছে এবং শব্দ চয়নে পরিবর্তন আনছে- ফলে চূড়ান্তকরণে সময় লাগছে।

হোয়াইট হাউজে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে জবাব দেয়নি। 

আনুষ্ঠানিক চুক্তি ঘোষণায় দেরী নিয়ে উদ্বেগের কারণে মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ান মুদ্রা ‘ওন’ ০.৭ শতাংশ পর্যন্ত দুর্বল হয়ে সাত মাসের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র সাবমেরিন প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ট্রাম্প সাম্প্রতিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, সাবমেরিন নির্মাণ অনুমোদিত হয়েছে, তবে তা মার্কিন কারখানায় করা হবে। ট্রাম্পের এই মন্তব্য দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সাবমেরিন নিয়ে আলোচনা এক সময় শুরু হয় যখন দেশ দুটি দাবি করে যে, তারা বাণিজ্য বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে একমত হয়েছে। তবে বিনিয়োগ তহবিলের কাঠামো নিয়ে মতবিরোধের কারণে ট্রাম্প-লি বৈঠকের পর কোনো যৌথ বিবৃতি দেওয়া সম্ভব হয়নি।

দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, শুল্ক সংক্রান্ত খসড়াটি প্রায় চূড়ান্ত এবং যৌথ তথ্যপত্র ঘোষণার জন্য প্রস্তুত হলে তা প্রকাশ করা হবে।

মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পমন্ত্রী কিম জং কোয়ান সংসদীয় শুনানিতে বলেন, যৌথ তথ্যপত্র নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে তিনি ঘোষণার দিনক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্যাকেজের একটি সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) প্রস্তুত। তবে এটি এখনও স্বাক্ষরিত হয়নি। কবে হবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

তিনি বলেন, “আমরা আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায় আছি, যাতে এটি সংসদে উপস্থাপনসহ পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।”