কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা সারাদেশব্যাপী ‘লকডাউন’ কর্মসূচির মধ্যেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গণপরিবহন চলাচল প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। তবে দূরপাল্লার বাসে যাত্রী সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ, ধোলাইপাড় ও টার্মিনাল ঘুরে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এমন চিত্র দেখা গেছে।
সকাল থেকেই রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় বাস, মিনিবাস ও প্রাইভেটকারসহ প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু টার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোতে যাত্রী নেই বললেই চলে।
ধোলাইপাড়ে বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, ফরিদপুর, ভাঙ্গা ও বরিশালগামী বেশ কয়েকটি বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু যাত্রী উঠছে না। কাউন্টারগুলো খোলা থাকলেও টিকিট বিক্রি হয়নি বললেই চলে।
পটুয়াখালীগামী যাত্রী মনির হোসেন বলেন, জরুরি কাজে বের হয়েছি। গাড়ি আছে, কিন্তু মনটা অস্থির। এখন তো আবার গাড়ি পোড়ানোর রাজনীতি শুরু হয়েছে। জানি না কখন কী হয়। মানুষের জীবনের কোনো দামই যেন আর নেই।
একই চিত্র যাত্রাবাড়ী টার্মিনালেও। সকাল থেকে বেশ কয়েকটি বাস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও যাত্রী না থাকায় এখনো অনেক বাসই গ্যারেজে দাঁড়িয়ে।
সাকুরা পরিবহনের সুপারভাইজার মাইনুল হাসান জানান, সাধারণ দিনে দুপুরের আগেই ৬টা গাড়ি ছেড়ে যায়। আজ বেলা ১১টা বাজলেও দুটি বাসও ছেড়ে গেছে। যাত্রী চাপ কম।
রায়েরবাগ থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়কে পুলিশের টহলও দেখা গেছে। প্রতিটি মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন, যাতে কোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
রায়েরবাগ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবির সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, গাড়ি বের হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু চালকরা আতঙ্কে আছে। দূরপাল্লায় যাত্রা করলে কখন কোথায় সমস্যা হয় বলা যায় না। গত কয়েকদিনে কয়েকটা গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, সেই ভয়টা এখনও কাজ করছে।
ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী এক বাসচালক আবদুল করিম বলেন, আজ সকাল ৬টায় গাড়ি ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু যাত্রী পাইনি। এখনো ১৫ জনও হয়নি। আগে এমন সময় কাউন্টারে দাঁড়ানো যেত না, এখন ফাঁকা।
যাত্রাবাড়ী টার্মিনালে বিএনএফ এক্সপ্রেসের সুপারভাইজার আমির হামজা বলেন, যাত্রী নেই বললেই চলে। আতঙ্কে মানুষ বাসে উঠতে চায় না। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত দুটি বাস ছেড়েছে।
এদিকে যাত্রাবাড়ী ও ধোলাইপাড় এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কিছু নেতাকর্মীর অবস্থান দেখা গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্রদল-শিবিরের মোটরসাইকেল টহলও দেখা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।