সাতসতেরো

পশ্চিমা সভ্যতার ‘দোলনা’ বলা হয় যে শহরকে

প্রাচীন বিশ্বের বৌদ্ধিক ও শৈল্পিক কেন্দ্র হিসেবে অ্যাথেন্সকে বিবেচনা করা হয়। এটি সেই শহর যেখানে মানবজাতির সবচেয়ে মূল্যবান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প এবং নাটকের জন্ম প্রাচীন অ্যাথেন্সে। আধুনিক সভ্যতার গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং অগ্রগামী চিন্তাভাবনার সূচনা হয়েছিলো এই শহরে। আজকের পশ্চিমা সভ্যতা এবং সমাজের মূল নীতি অনেকাংশে এথেন্সে তৈরি হওয়ার মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল। প্রাচীন গ্রীক ইতিহাসের বেশিরভাগ অংশই অ্যাথেন্স শহরে সংঘটিত হয়েছিল।

খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে এথেন্স গণতন্ত্র, দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং নাটকের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের উদ্ভাবনের মাধ্যমে পশ্চিমা সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করে। ফলে এই শহরকে বলা হয় পশ্চিমা বিশ্বের দোলনা।

এথেন্সের স্বর্ণযুগের একজন প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন পেরিক্লিস। ছবি; সংগৃহীত

পশ্চিমা দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সক্রেটিস এই শহরের মানুষ ছিলেন।  তিনি প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের ‘সক্রেটিক পদ্ধতি’ প্রবর্তন করেন।  সক্রেটিসের ছাত্র ও দার্শনিক প্লেটো এথেন্সে ‘একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা পশ্চিমা বিশ্বের প্রথম উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত।  প্লেটোর ছাত্র এবং বহুবিদ্যাবিশারদ দার্শনিক ছিলেন অ্যারিস্টটল। যিনি যুক্তিবিদ্যা, অধিবিদ্যা, জীববিজ্ঞান এবং নীতিশাস্ত্র সহ অসংখ্য ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছেন। এথেন্সের স্বর্ণযুগের একজন প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক এবং সেনাপতি ছিলেন পেরিক্লিস। তার নেতৃত্বে এথেন্স গণতন্ত্র ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এবং অ্যাক্রোপলিসসহ বিভিন্ন স্থাপত্য তৈরি হয়।  

এথেন্সের আরেক বিখ্যাত ব্যক্তি ক্লিসথেনিস, যিনি এথেনীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। ক্লিসথেনিস এথেন্সের সংবিধান সংস্কারে সহায়তা করেছিলেন। সোফোক্লিস এবং ইউরিপিডিস হলেন প্রাচীন গ্রীসের বিখ্যাত নাট্যকার, যাদের লেখা নাটকগুলো আজও টিকে আছে এবং মঞ্চস্থ হয়। এছাড়াও আইস্কাইলাস বিশ্বের কাছে গ্রীক ট্র্যাজেডির জনক হিসাবে গণ্য। 

প্রায় ৩,৪০০ বছরের লিখিত ইতিহাস রয়েছে এথেন্সে।  এটি প্রাচীন গ্রিসের একটি সুরক্ষিত কেন্দ্র ছিল, যা মাইসেনিয়ান যুগে নির্মিত হয়েছিল।বর্তমানে এই শহরের স্মৃতিস্তম্ভগুলো ধ্রুপদী সভ্যতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

তথ্যসূত্র: এথেন্স ম্যারাথন অবলম্বনে