সারা বাংলা

২০ টাকার ভাড়া নিয়ে সংঘর্ষ: খেয়াঘাট বন্ধ, দুর্ভোগ চরমে

নরসিংদীর চরদিঘলদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার হাজারো মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী রসুলপুর–জিতরামপুর–শান্তিপুর খেয়াঘাট। 

প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে নরসিংদী সদর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল, চরদিঘলদী ইউনিয়নসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করেন।

তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যায় খেয়া পারাপার ব্যবস্থা। এতে দুই পাড়ের কয়েক হাজার মানুষ মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জিতরামপুর ও টিটিরচর গ্রামের বাসিন্দারা এখনো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১৮ জন আহত হন। কেউ বিছানায় শয্যাশায়ী, আবার কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছেন ক্ষত নিয়েই। এটাকে কেন্দ্র করে অনেকটাই বন্ধ হয়ে পড়েছে নৌ চলাচল।

আহতদের একজন রিপন মিয়া বলেন, “সরকারি ভাড়া চার টাকা হলেও তারা ২০ টাকা করে নিচ্ছিলো। প্রতিবাদ করায় আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”

অন্যদিকে খেয়াঘাট বন্ধের সুযোগে শান্তিপুর গ্রামের কয়েকজন মাঝি ডিঙি নৌকায় জনপ্রতি ২০–৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে যাত্রী পারাপার করছেন। তারা দাবি করেন, “সরকারিভাবে ডাক আনা হয়নি। যাদের প্রয়োজন তারাই বেশি টাকা দিয়ে পার হচ্ছেন।” 

স্থানীয়দের আশঙ্কা- এলাকায় এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে, আবারো যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত জনপ্রতি চার টাকা ভাড়ায় খেয়াঘাটটির ইজারা পান রসুলপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম (সেন্টু)। কিন্তু তিনি ঘাটটি মোটা অঙ্কের বিনিময়ে চাঁনমিয়ার কাছে ‘ফাঁড়ি ইজারা’ দেন। পরে চাঁনমিয়া যাত্রীপ্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে আসছিলেন। 

এ নিয়ে যাত্রীদের অসন্তোষ শুরু হলে শহিদ মেম্বার–সমর্থক ওহাব মিয়া প্রতিবাদ করেন। এতে চাঁনমিয়ার লোকজন তাকে বেধড়ক মারধর করে আহত করে। এরপর ৪ ও ৮ নভেম্বর দুই দফা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয় পরিস্থিতি। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে জেলা পরিষদ তদন্ত করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সত্যতা পায় এবং ইজারা বাতিল করে।

নরসিংদীতে খেয়া পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার জের ধরে মাদ্রাসার মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (৮ নভেম্বর) ভোর থেকে মাধবদী থানার চরাঞ্চল চরদীঘলদী ইউনিয়নের চর জিতরামপুরে এ সংঘর্ষ হয়।

জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী নূর-ই-ইলহাম বলেন, “ইজারাদার শফিকুল ইসলামকে ইজারা বাতিলের চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত চার টাকার বদলে ২০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ইজারা বাতিল করা হয়।”

স্থানীয় বাসিন্দা জিতরামপুরের মাসুম মিয়া বলেন, “প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রীসহ শত শত মানুষ এই পথ দিয়ে নরসিংদীতে যাতায়াত করেন। খেয়াঘাট বন্ধ থাকায় সবাই কষ্টে আছে। কিছু মাঝি যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন। মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে দ্রুত খেয়াঘাটটি চালু করা উচিত।”

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওহাব রাশেদ বলেন, “অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় আগের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। এরইমধ্যে নতুন ইজারাদার নিয়োগের জন্য এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। দ্রুত নতুন ইজারা দেওয়া হবে। জেলা পরিষদের লোকবল কম থাকায় আপাতত সরাসরি খেয়া পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।”