রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারকের ছেলেকে ছুরিকাঘাতে হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারকদের নিরাপত্তা জোরদারের দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে মীর মশাররফ ভবনের সামনে আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এতে আইন, আল ফিকহ অ্যান্ড ল, ল অ্যান্ড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ছেলেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে। একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে জুডিশিয়ারি।
তারা বলেন, রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের আশ্রয়স্থল ও ভরসার জায়গা আদালত। আজ তার নিরাপত্তা হুমকির মুখে। তার নিরাপত্তা যেহেতু রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ হয়েছে, সাধারণ মানুষ সেখানে শঙ্কিত। রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষসহ সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
তারা আরো বলেন, যেখানে রাষ্ট্র আদালতকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কিভাবে দিবে? এজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটাকে দ্রুত বাস্তবায়ন করে জুডিশিয়ারিকে আলাদা করে বিচারপতিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ন্যায়বিচার যাতে মানুষ পায়, তার সমস্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। রাষ্ট্র যদি এর যথাযথ ব্যবস্থা না করে এবং যে হত্যাকারীকে যথোপযুক্ত শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন না করে, তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব।
তাদের দাবি, দ্রুত বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের যথাযথ প্রটেকশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তারক্ষীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সামগ্রী যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে। অন্যথায়, বিচারকবর্গ কলম বিরতির যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, সেটার সঙ্গে আমরা সংহতি ঘোষণা করে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।
আইন বিভাগের পক্ষ থেকে ইমাম হোসেন বলেন, “অবিচারের রাষ্ট্র চলছে। একজন বিচারকের পরিবারের উপর যে নৃশংস ঘটনার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য একটি সংকটকে আমাদের সামনে হাজির করেছে। যদি বিচারকরা নিঃসংকোচে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করতে পারেন, তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোনভাবেই আমরা আশা করতে পারি না।”
তিনি বলেন, “বিচার বিভাগের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির পারিবারিক নিরাপত্তা যেমন দরকার, তেমনি দরকার তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা। একজন দায়রা জজ আদালতের বিচারককে ভয়ঙ্কর সব অপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনা করতে হয়। যদি তাদের রাষ্ট্র সিকিউরিটি দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদের দেশে হওয়া সব ভয়ঙ্কর অপরাধের বিচার করতে আমরা ব্যর্থ হব এবং অপরাধের বিস্তার আরো বাড়বে।”
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাসায় ঢুকে তার ছেলেকে হত্যা ও স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত লিমন মিয়াকে গ্রেফতার করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শনিবার দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক মামুনুর রশিদ এ আদেশ দেন।