মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষই প্রয়াত দোষী সাব্যস্ত কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টাইনের বিচার বিভাগের ফাইলগুলো জনসম্মুখে প্রকাশের অনুমোদন দিয়েছে। পরিনিধি পরিষদ ৪২৭-১ ভোটে এটি অনুমোদন করেছে এবং সিনেট আনুষ্ঠানিক ভোট ছাড়াই সর্বসম্মতিক্রমে এটি দ্রুত পাস করেছে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রস্তাবটি এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টেবিলে যাবে। তার স্বাক্ষরের পর ৩০ দিনের মধ্যে মার্কিন বিচার বিভাগ এসব ফাইল প্রকাশ করবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কয়েক মাস ধরে এসব ফাইল প্রকাশের বিরোধিতা করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি আগের অবস্থান থেকে সরে এসে কংগ্রেসকে রেকর্ড প্রকাশের জন্য ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানোর মাত্র কয়েকদিন পরেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। ট্রাম্প তার অনেক সমর্থকের জনসমক্ষে প্রতিবাদের মুখে নথিপত্র প্রকাশের জন্য ভোট দিতে বলেছিলেন।
২০ হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার নথির মধ্যে কিছু জায়গায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথাও উল্লেখ রয়েছে। গত সপ্তাহে এটি ঘিরে এপস্টাইনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক আবারও শিরোনামে আসে। যদিও কোনো অন্যায় কাজ করার কথা অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস।
এপস্টাইনের ফাইলটি প্রকাশের বিষয়ে পরিনিধি পরিষদে একমাত্র আপত্তিকারী ছিলেন লুইজিয়ানার রিপাবলিকান ক্লে হিগিন্স। এসব তথ্য প্রকাশের ফলে ‘নিরপরাধ মানুষদের আহত করা হচ্ছে’ বলেও উদ্বেগ জানিয়েছিলেন তিনি।
ক্যাপিটল হিলের যারা ফাইলটি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন তাদেরকে আক্রমণ করার পরিবর্তে ট্রাম্পের ‘লুকানোর কিছু নেই’- এমন বক্তব্য ওয়াশিংটনের অনেককে অবাক করেছে।
এপস্টাইনের ফাইল প্রকাশে বারবার চাপ প্রয়োগ করার ঘটনাকে ‘ডেমোক্র্যাটদের প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন হাউস স্পিকার মাইক জনসন। মঙ্গলবার তিনি প্রকাশের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
মার্কিন সিনেটে এই পদক্ষেপটি শেষ হতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু হাউসে বিকেলের ভোটের পর, ঘটনাক্রম দ্রুত গতিতে বদলাতে থাকে।
সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার বিলটি উত্থাপন করেন। এ নিয়ে যেহেতু কেউ আপত্তি করেনি, তাই কোনো বিতর্কও হয়নি এবং বিলটিতে কোনো সংশোধনী যুক্ত করা হয়নি।
বিলটি সিনেট থেকে প্রেসিডেন্টের ডেস্কে যাবে, যেখানে তিনি এটিকে আইনে পরিণত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ফাইলগুলো প্রকাশের জন্য কংগ্রেসের ভোটের প্রয়োজন ছিল না- ট্রাম্প নিজেই প্রকাশের আদেশ দিতে পারতেন।
বিলটিতে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে আইন প্রণয়নের ৩০ দিনের মধ্যে এপস্টাইন এবং তার সহযোগী গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের সাথে সম্পর্কিত ‘সব রেকর্ড, নথি, যোগাযোগ এবং তদন্তমূলক উপকরণ’ প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যৌন অপরাধী ও অর্থদাতা এপস্টাইনকে ২০১৯ সালে নিউ ইয়র্কের কারাগারে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে রায় দেওয়া হয়।
২০১৯ সালে যৌনতার জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের একটি নেটওয়ার্ক চালানোর অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছিল। এর ১১ বছর আগেও ২০১৮ সালে এক নাবালিকাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
এপস্টাইনের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি তদন্তের সময়, হাজার হাজার নথি সংগ্রহ করা হয়েছিল, যার মধ্যে ভুক্তভোগী এবং সাক্ষীদের সাক্ষাৎকারের প্রতিলিপি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এপস্টাইনের নির্যাতনের শিকার অ্যানি ফার্মার মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ফাইলগুলো গোপন রাখা ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্বাসঘাতকতা’র শামিল। যেহেতু এই অপরাধগুলো সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি, তাই আরও অনেক মেয়ে এবং নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”
ট্রাম্প এবং এপস্টাইন পূর্বে একই ধরনের লোকদের সাথে মেলামেশা করতেন। কিন্তু ট্রাম্প দাবি করেন, ২০০৮ সালে এপস্টাইন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো দাবি করেন যে, তিনি এপস্টাইনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
গত সপ্তাহে, হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাটরা তিনটি ইমেইল চেইন প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে এপস্টাইন এবং ম্যাক্সওয়েলের মধ্যে চিঠিপত্র, যিনি বর্তমানে যৌন পাচারের জন্য ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
এদের মধ্যে কেউ কেউ ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে ২০১১ সালে পাঠানো একটি ইমেইলও রয়েছে, যেখানে এপস্টাইন ম্যাক্সওয়েলকে লিখেছিলেন: "আমি চাই তুমি বুঝতে পারো যে কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করেনি সে ট্রাম্প, (ভিক্টিম) তার সাথে আমার বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছে।"
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে ইমেইলে উল্লেখিত ভুক্তভোগী হলেন এপস্টাইনকে অভিযুক্ত করা ভার্জিনিয়া গিফ্রে।
এপ্রিল মাসে মারা যাওয়া গিফ্রে বলেছিলেন যে তিনি কখনও ট্রাম্পকে কোনো নির্যাতনে অংশ নিতে দেখেননি এবং ইমেইলগুলোতে ট্রাম্পের কোনো অন্যায়ের কোনো ইঙ্গিত নেই।
ট্রাম্পও এপস্টাইনের সাথে সম্পর্কিত কোনো অন্যায়ের কথা বারবার অস্বীকার করে আসছেন।