অর্থনীতি

‘৩০ শতাংশ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করতে চাচ্ছে’

মোবাইল ফোন বিক্রেতাদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘দেশের মোবাইল বাজারে নতুন সিন্ডিকেট গঠনের চেষ্টা চলছে। আর এ কারণে আমাদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পিয়াসকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।’’

ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে এমনটি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা। তাদের দাবি, ‘‘দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ীকে বাদ দিয়ে মাত্র ৩০ শতাংশ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করতে চাইছে একটি চক্র।’’ 

এনইআইআর হলো জাতীয় ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার, যা মোবাইল ফোনের জন্য জাতীয় ডাটাবেস। এটি টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অবৈধ বা চুরি করা মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ করতে সাহায্য করে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে চাচ্ছে সরকার। এতে শুধু বৈধভাবে আমদানি করা ও অনুমোদিত ফোনই দেশের নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা যাবে।

আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘এনইআইআর বাস্তবায়ন: মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন হয়। মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির যে সংবাদ সম্মেলন ‘ঠেকাতে’ দুজনকে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ, সেই সংবাদ সম্মেলন করেছে মোবাইল ফোন বিক্রেতাদের সংগঠনটি। তাদের মধ্যে ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেলকে সকালে ছেড়ে দেওয়া হলেও কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াস ডিবি হেফাজতে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি শামীম মোল্লা, কেন্দ্রীয় নেতা ও চট্টগ্রাম বিজনেস ফোরামের সভাপতি আরিফুর রহমান, শাহ আলম বোখারীসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, ‘‘আজকের প্রেস কনফারেন্সের কারণে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাত ৩টায় মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক পিয়াসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু প্রেস কনফারেন্স ঠেকাতে এই গ্রেপ্তার। কিছু ব্র্যান্ড এবং বাজারনিয়ন্ত্রক স্বার্থগোষ্ঠী এ ঘটনায় জড়িত।’’

মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের নেতা আরিফুর রহমান বলেন, ‘‘ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী আইনসম্মতভাবে আনা মোবাইল সেট বাজারে বিক্রি করার সুযোগ না দিলে লাখো ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ৫৭ শতাংশ ট্যাক্স বাড়লে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। এনইআইআর সিস্টেমে সম্ভাব্য ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত ট্যাক্স বৃদ্ধি মোবাইলের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার ও শিক্ষার্থীরা।’’ 

তিনি জানান, ‘‘‘ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী দেশে আনা কম দামে ভালো কনফিগারেশনের ফোন মার্কেটে পাওয়ায় সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন উপকৃত হয়েছে। এআই নির্ভর ভবিষ্যতের যুগে মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে গেলে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। ১৮ জনের লাইসেন্সে পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণযোগ্য নয়।’’ 

সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘দেশের মোবাইল বাজার বর্তমানে মাত্র ১৮ জন লাইসেন্সধারীর হাতে কেন্দ্রীভূত। ২০ কোটি মানুষের দেশে মোবাইল ব্যবসার লাইসেন্স ১৮ জনের হাতে থাকতে পারে না। লাইসেন্স সংখ্যা অন্তত ৫ হাজার করতে হবে।’’

বিটিআরসি চেয়ারম্যানের মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে শামীম মোল্লা বলেন, ‘‘বিটিআরসি চেয়ারম্যানের ‘চোর’ মন্তব্যে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অপমাণিত বোধ করেছেন। প্রশ্ন ব্যাগেজ রুলসে সরকার অনুমোদন দেওয়া পণ্য বিক্রি করলে তা কীভাবে অবৈধ হয়? আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স দিতে প্রস্তুত, তবে যৌক্তিক নীতিমালা প্রয়োজন। বাস্তবায়নের আগে গণশুনানি করে জনগণের মতামত নিতে হবে।’’ 

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ‘‘‘এনইআইআর বাস্তবায়নে ‘সিন্ডিকেটের প্রভাবে’ এই সিদ্ধান্ত কোটি মোবাইল ব্যবহারকারীর ওপর প্রভাব ফেলবে। জনগণ ক্ষুব্ধ হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। জনগণকে ক্ষেপাবেন না। প্রয়োজন হলে গণআন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।’’