ক্যাম্পাস

শৈবাল থেকে ৩ মূল্যবান পণ্য উদ্ভাবনে বাকৃবির সাফল্য

টেকসই অর্থনীতির পথে সি-উইড (সামুদ্রিক আগাছা) বায়োরিফাইনারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামুদ্রিক শৈবাল থেকে উচ্চ-মূল্যের পণ্য উৎপাদনের একটি গবেষণা প্রকল্প নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমিকে শক্তিশালী ও টেকসই করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

গবেষণায় সামুদ্রিক গ্র্যাসিলারিয়া টেনুইস্টিপিটাটা নামক শৈবাল ব্যবহার করা হয়েছে, যা থেকে মূলত তিনটি উচ্চমূল্যের পণ্য পর্যায়ক্রমে আহরণ করা সম্ভব হয়েছে। পণ্য তিনটি হলো রঞ্জক পদার্থ, অ্যাগার ও সেলুলোজ। 

‘ডেভেলপমেন্ট অব হাই-ভ্যালু প্রোডাক্টস থ্রু সি-উইড বায়োরিফাইনারি টেকনোলজিস ফর সাসটেইনেবল ব্লু ইকোনমি ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবং ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রোজেক্ট’ (এসসিএমএফপি) এর অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) গবেষকরা একটি সাব-প্রজেক্টের মাধ্যমে এই আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন।

এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো, সমুদ্রের সম্পদকে কাজে লাগিয়ে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং দেশে ব্লু ইকোনমির বিকাশ ঘটানো ।

সি-উইড বায়োরিফাইনারি প্রযুক্তি হলো- একটি আধুনিক পদ্ধতি, যা সামুদ্রিক শৈবালের কাঁচামাল থেকে একে একে বিভিন্ন মূল্যবান উপাদান নিষ্কাশন নিশ্চিত করে। এ প্রক্রিয়ার বিশেষত্ব হলো, এতে শৈবালের সম্পূর্ণ অংশ ব্যবহৃত হয়, ফলে বর্জ্য খুবই কম বা প্রায় থাকে না বললেই চলে।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) গবেষণা সংক্রান্ত এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক এবং বাকৃবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হান্নান।

গবেষণা প্রকল্পটি শুরু হয় ২০২৪ সালের মার্চ মাসের দিকে এবং এতে সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন পবিপ্রবির ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হক।

অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হান্নান বলেন, “গ্র্যাসিলারিয়া শৈবাল থেকে জলীয় পদ্ধতিতে ফাইকোবিলিপ্রোটিন রঞ্জক নিষ্কাশন করা হয়, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য যুক্ত। এই রঞ্জক দইসহ বিভিন্ন খাদ্যে প্রাকৃতিক রঙ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য এবং দইয়ের স্বাদ, গন্ধ, রং ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সক্ষম।”

তিনি বলেন, “রঞ্জক অপসারণের পর অবশিষ্ট শৈবাল থেকে অ্যাগার উৎপাদিত হয়, যার উৎপাদন মাত্রা প্রায় ১৫ শতাংশ। অ্যাগার জেল খাবার উপাদান হিসেবে বেকারি, ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প এবং মাইক্রোবায়োলজি গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। শেষে অবশিষ্ট অংশ থেকে সেলুলোজ সংগ্রহ করে অ্যাগার ও জিলাটিনের সঙ্গে মিশিয়ে শক্তিশালী, অতিবেগুনী রশ্মি প্রতিরোধক ও জৈব-বিয়োজ্য বায়োফিল্ম তৈরি করা হয়, যা প্যাকেজিং ও বায়োমেটেরিয়াল শিল্পে প্রয়োগযোগ্য।”

এ বিষয়ে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের জন্য নীল অর্থনীতি অপরিহার্য। বাকৃবির এই গবেষণা আমাদের সামুদ্রিক সম্পদকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সাহায্য করবে।”