সারা বাংলা

ধামরাইয়ে হেলে যাওয়া সেই ভবনটি আরো কাৎ হয়ে পড়ল

ঢাকার ধামরাইয়ে গত বছর হেলে পড়া চারতলা ভবনটি এবারের ভূমিকম্পে আরো কাৎ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪ সালের ১৩ মে হঠাৎ করেই ওই ভবনের একাংশ পাশের ছয়তলা ভবনের ওপর হেলে পড়ে। বিষয়টি রাতারাতি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।  

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চলে ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর পরপরই ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকার ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের ভেতরে মো. জিয়াউদ্দিনের বাড়ির চারতলার করিডরের অংশটি পাশের অপর ভবনের ওপর হেলে পড়ার খবর পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন: ধামরাইয়ে হেলে পড়া ভবনটি অবৈধ, প্রকল্পটিই ছিল কৃষি জমিতে 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের ভেতরে পাশাপাশি দুটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দুই ভবনের মধ্যে ১০ ফুট জায়গায় করিডরের মতো আরেকটি চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এটির ভেতর দিয়েই পেছনের দিকে অপর মূল ভবনে ঢুকতে হয়। এই করিডরের মতো অংশটিই পাশের ছয়তলা ভবনের ওপর হেলে পড়েছে।

ভবনটিতে ঢুকে দেখা যায়, করিডরের তৃতীয় তলার অংশটি পাশের ছয়তলা ভবনের ওপর হেলে রয়েছে। তিন তলার বারান্দার রেলিংয়ের ইটের গাঁথুনির অংশটি ফেটে গেছে। তবে, করিডরের আর কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যদিও করিডর দিয়ে ঢুকে চারতলা ভবনের ভেতরেও কোনো ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা যায়নি।

এলাকাবাসী জানান, প্রথম ভবনের প্লটটি ছিল ছয় শতাংশ আকারের। পৌরসভা থেকে এই জমিতে ছয়তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন নিয়ে ৭০ ফুট পাইলিং করা হয়। সেই পাইলিং করা জমি চার শতাংশ ও দুই শতাংশ আকারে কিনে নেন মো. রফিক ও মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন।

আরো পড়ুন: ধামরাইয়ে হেলে পড়েছে চারতলা ভবন

এরমধ্যে রফিক সড়কের সামনে তিন তলা ভবন নির্মাণ করেন। আর পেছনে দুই শতাংশ জমিতে চারতলা ভবন নির্মাণ করেন জিয়াউদ্দিন। আর এই প্লটের পাশেই ১০ ফুট সড়কের জায়গা রেখে আরেকটি ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেন সামসুল হক নামে এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে ১০ ফুট সড়কের জায়গাটি আবাসন প্রকল্পের কাছ থেকে কিনে নেন জিয়া। সেখানেই করিডোর আকারের ১০ ফুট চওড়া ও ৩০ ফুট লম্বা আরেকটি চার তলা ভবন নির্মাণ করেন তিনি। ওই করিডোর দিয়েই মূল ভবনে প্রবেশ করতে হয়। দুই ভবনের মাঝখানে থাকা এই করিডোর আকারের ভবনটিই গত বছরের ১১ মে হেলে পড়ে। আজ ভূমিকম্পের কারণে ভবনি আরো কাৎ হয়ে পড়েছে।  

আলী হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ, বিষয়টি আগেও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আমরা অনেক ঝুঁকিতে আছি, যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে। বিশেষ করে আজকে যে ভূমিকম্প হয়েছে, তাতে আরো বেশি ঝুঁকে গেছে ভবনটি। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ভবিষ্যতে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, এর দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।” 

অপর বাসিন্দা আরমান হোসেন বলেন, “আগেই ভবনটি হেলে পড়েছিল। আজকে দেখলাম আরও বেশি ঝুঁকে গেছে। চলাফেরা করতেও ভয় লাগছে, কখন ভেঙে পড়ে। ভূমিকম্পের সময় নিজেদের ভবনের কথা তো চিন্তা হয়েছেই, তারচেয়ে বেশি চিন্তা হয়েছে ওইটা ভেঙে পড়ে কিনা। তারপর এসে দেখি এটি ভবনের সঙ্গে একদম ছুঁয়ে রয়েছে। এর আগে, এই ভবন হেলে পড়ায় এলাকাবাসী সবাই গণসাক্ষরও জমা দিয়েছি। প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”

হেলে পড়া ভবন মালিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বলেন, “সামনের সামান্য অংশে আরো দুই বছর আগেই ফাটল ধরেছে। পাশের বাড়িটির মালিক আমার জমির ভেতরে এসে বাড়ি তৈরি করছেন। উনি এক ইঞ্চি জমিও পাশে রাখেননি। হেলে পড়া অংশটিতে কোনো ভাড়াটিয়া নেই। আজকের ভূমিকম্পে ভবনটি একটুও হেলেনি। ভবনটি ভেঙে ফেলব।”

ধামরাই পৌরসভার সচিব গোলাম নবী বলেন, “ওই ভবনটির বিষয় শুনেছি। পৌরসভার কর্মকর্তারা ভবন পরিদর্শন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।”