শক্তিশালী ভূমিকম্পে গাজীপুরে মুহূর্তের মধ্যে সৃষ্টি হয় ব্যাপক আতঙ্ক। উঁচু ভবন দুলতে শুরু করলে বাড়ি, অফিস, শিল্পকারখানা, দোকান থেকে মানুষ দ্রুত খোলা জায়গায় ছুটে আসেন। কয়েকটি শিল্পকারখানার ভবন থেকে আতঙ্কিত শ্রমিকরা নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন। জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোয় বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২৫২ জন মানুষ ভর্তি আছেন, তাদের বেশির ভাগই পোশাকশ্রমিক।
মহানগরীর টঙ্গী এলাকায় ভূমিকম্পের সময় পিনাকী গার্মেন্টস এবং ফ্যাশন প্লাস গার্মেন্টসের শ্রমিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। শ্রমিকেরা দ্রুত ভবন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে গেট এবং সিঁড়িতে প্রচণ্ড ভিড় ও হুড়োহুড়ির সৃষ্টি হয়। এ সময় অনেক শ্রমিক পদদলিত হন। এ ঘটনায় তারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং আতঙ্কে অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাৎক্ষণিকভাবে আহত ব্যক্তিদের টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ওহেদুজ্জামান বলেন, “আতঙ্কে বের হতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”
এ ছাড়া মহানগরীর বাসন থানাধীন কোজিমা লিরিক কারখানা, লীবাস টেক্সটাইল লিমিডেট, হাসান তানভীর নামক কারখানা, ডে ফ্যাশন কারখানা কোস্ট টু কোস্টু নামক কারখানা এবং জেলার শ্রীপুর থানাধীন ডেনিম্যাক ডেনিম লিমিডেট কারখানার শ্রমিকরা ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, “ভূমিকম্প হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে আমরা প্রচুর পেশেন্ট (রোগী) পাই, এদের অধিকাংশ কারখানা শ্রমিক। এদের মধ্যে অনেকেই ভয়ে অসুস্থ হয়েছেন। আমরা অন্তত শতাধিক মানুষকে চিকিৎসা দিয়েছি এবং যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের অন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি।”
এদিকে, শ্রীপুরে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে বহুতল ভবন থেকে নামতে গিয়ে দেড় শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে কেওয়া পূর্বখণ্ড গারোপাড়া এলাকায় ডেনিমেক নামের একটি পোশাক কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটে। আহত শ্রমিকদের মধ্যে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন ১৩০ জন। এ ছাড়া, উন্নত চিকিৎসার জন্য আরো ২০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭৭ জন ভর্তি আছেন।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন মামুনুর রহমান জানান, টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ৮৫ জন এবং গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯০ জন ভর্তি রয়েছে। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর আগে ১৩০ জন ভর্তি ছিলেন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে দেশে ভূমিকম্প আঘাত হানে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিস) বলছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৫। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদী।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গণমাধ্যমকে জানান, নরদিংসদীর মাধবদীতে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়েছে।