সাতসতেরো

স্পার্টা: অদ্ভুত রাজতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হত

প্রাচীন গ্রিসের প্রসঙ্গ আসলে দুই নগর রাষ্ট্রের নাম চলে আসে-স্পার্টা ও এথেন্স। এথেন্স শহরটি ঘিরে পুরো পৃথিবীর মানুষের আগ্রহ রয়েছে কিন্তু স্পার্টার ইতিহাসও মানুষ মনে রেখেছে। এর ইতিহাস মনে রেখেছে অতি সামরিক একটি আগ্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে৷

স্পার্টা ছিল প্রাচীন গ্রিসের একটি শক্তিশালী সামরিক নগর-রাষ্ট্র। যা পেলোপোনিস উপদ্বীপে অবস্থিত ছিল। স্পার্টা গ্রীসের দক্ষিণ-পূর্ব পেলোপোনিজ অঞ্চলে অবস্থিত ছিল।শহরের কাছের সমুদ্রবন্দর জিথিয়াম থেকে এটি প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে ছিল।  এর কঠোর সামরিক প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা এবং যুদ্ধ ক্ষমতাই এথেন্সের মতো অন্যান্য নগর-রাষ্ট্র থেকে আলাদা করে তোলে।

সাত বছর বয়স হলেই স্পার্টার ছেলেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হত। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধে এথেন্সের কাছে পরাজয়ের পর স্পার্টার শাসক প্রত্যেক সক্ষম পুরুষকে সৈনিক হিসেবে বাধ্যতামূলক রাষ্ট্রে সেবা দেয়ার নিয়ম চালু করেন।  ৭ বছর বয়স হলেই স্পার্টার ছেলেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হত। স্পার্টান পুরুষদের ছিল একটিই পেশা, সেটি হল তাদের অবশ্যই সৈনিক হতে হবে। তাদেরকে কঠোর সামরিক প্রশিক্ষণের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। টিকে থাকার জন্য স্পার্টান সৈনিকদের খাবার চুরি করার শিক্ষাও দেওয়া হতো। 

রাষ্ট্র নিজে উদ্যোগী হয়ে যে পুরুষ বেশি ছেলে জন্ম দিত তাকে পুরস্কৃত করত। আবার যে বিয়ে করত দেরি করত তাকে সবার সামনে অপদস্থ করত। বিয়ের আগে স্পার্টার নারীরা তাদের মাথা ন্যাড়া করে দিত এবং বিয়ের পর চুল ছোট করে রাখত। অনূর্ধ্ব ৩০ বয়সী স্পার্টান যোদ্ধাদের স্ত্রীর সাথে থাকার নিয়ম ছিল না। রাতে ব্যারাক থেকে পালিয়ে গিয়েই তবে স্ত্রীদের সাথে তারা দেখা করত। 

ছোটবেলা থেকেই স্পার্টান ছেলেদের কঠোর সামরিক প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো, যা তাদের শক্তিশালী এবং দক্ষ যোদ্ধায় পরিণত করত।স্পার্টার সমাজ ছিল কঠোরভাবে শ্রেণিবদ্ধ। এর মধ্যে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নাগরিক, দাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

স্পার্টা একটি অদ্ভুত রাজতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হত, যেখানে একই সময়ে দুজন রাজা শাসন করতেন। এছাড়াও, একটি কাউন্সিল (গেরৌসিয়া) রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ করত। এথেন্সের বিপরীতে, স্পার্টায় শিক্ষা, শিল্প ও দর্শনের চেয়ে সামরিক শক্তিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হত।

স্পার্টার অর্থনীতি ছিল মূলত সামরিক এবং কৃষিনির্ভর। স্পার্টানরা তাদের সামরিক শক্তি এবং সম্পদ দ্বারা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম ছিল। 

প্রথম পেলোপনেশি পার্শ্ববর্তী এথেন্স যখন তার নাগরিকদের সঙ্গে উদার আচরণ দেখাচ্ছিলে সেই একই সময়ে স্পার্টার নাগরিকরা কঠিন নিয়মের মধ্যে দিন পাড় করছিলো।  সামরিকভাবে অতি শক্তিশালী হয়ে ওঠার পরে খ্রিস্টপূর্ব ৩৭১ অব্দে লুক্ট্রার যুদ্ধে গ্রিসের আরেক নগর রাষ্ট্র থিবসের কাছে স্পার্টার ভূমিধস পরাজয় ঘটে। সামরিক অভিযান চালানো থিবসিয়ান জেনারেল এপামিনোনডাস স্পর্টার ভূমিদাস হেলটদের স্বাধীনতা প্রদান করেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী দাস হিসেবে কাটানো হেলটরা  স্পার্টানদের পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে মুক্তি পায়।

১৮৩৪ সালে গ্রিসের রাজা অত্তো স্পার্টায় আধুনিক যুগের শাসনপ্রণালী চালু করেন। এর মাধ্যমে প্রাচীন গ্রিসের সেই সামরিক রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘটে। আধুনিক স্পার্টা শহরটি গ্রীসের ল্যাকোনিয়ায় অবস্থিত এবং আজও স্পার্টা নামে পরিচিত। শহরের মূল অংশটি আজও প্রাচীন স্পার্টার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।

সূত্র: ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি স্পার্টা