যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার ফলে একটি জাতির কয়েক প্রজন্ম দাসে পরিণত হয়েছিলো। বলা হচ্ছে হেলটসদের কথা। যারা ছিল প্রাচীন স্পার্টার একটি দাস-শ্রেণী। এরা মূলত ল্যাকোনিয়া এবং মেসেনিয়ার জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল।
গ্রীক ভূগোলবিদ পাউসেনিয়াসের মতে, “হেলটসরা হেলোস নামক এক অঞ্চল থেকে এসেছে, যাদের ওপর স্পার্টান রাজতন্ত্র প্রভাব খাটাতে শুরু করে। একসময় স্পার্টানরা হেলটসদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে, সে যুদ্ধে হেলটসরা পরাজিত হয়। পরাজিত হওয়ার পর সবাইকে স্পার্টানদের দাস হওয়ার শর্তে জীবন ভিক্ষা দেওয়া হয়।”
যদিও তারা রাষ্ট্রের মালিকানাধীন ছিল, তবুও তারা পরিবার ও সম্পত্তি রাখত এবং কোনো স্পার্টিয়েট তাদের অন্য কোথাও বিক্রি করতে পারত না, এই দিক থেকে তাদের কিছুটা সুরক্ষা ছিল। ধারণা করা হয় হেলটরা ছিল মেসেনীয়দের বংশধর, যাদের স্পার্টানরা খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে পরাজিত করার পর থেকে তারা দাসে পরিণত করেছিল।
স্পার্টার পুরুষরা খেলাধুলা, সামরিক প্রশিক্ষণ, যুদ্ধ, রাজনীতির মতো ব্যাপারগুলো নিয়ে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতো। যদিও স্পার্টার অর্থনীতি কৃষিকাজের ওপর নির্ভর করতো, কিন্তু তারা কৃষিকাজে সময় দিতে পারতো না। তাই কৃষিকাজে হেলটসরা বেশি বেশি নিয়োগ পেতে লাগল। দেখা গেলো যে- বাড়ি তৈরি, স্পার্টা যোদ্ধাদের অস্ত্র আনা-নেওয়া, সেগুলো পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি তারা ঘর গৃহস্থলির কাজও করতে শুরু করলো। তবে যুদ্ধের সময় এলে হেলটসদেরও সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। যাতে তারা শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়তে পারে। এভাবেই তাদের জীবনচক্র আবর্তিত হতো।
হেলোটদের কেউ কাজে ভুল করলে কিংবা বিদ্রোহ করলে কঠিন নির্যাতন ভোগ করতে হতো। কারও হাত কেটে দেওয়া হতো, কারও পা কেটে দেওয়া হতো। এমনকি জনসম্মুখে ফাঁসিও দিয়ে দিতো। হেলটসদের ওপর স্পার্টানদের অত্যাচারের একটি অংশ ছিল ‘ক্রিপ্টিয়া’, যা ছিল একটি গুপ্ত পুলিশ বাহিনী, যারা হেলটদের ওপর নজরদারি করত এবং তাদের হত্যা করত।
হেলটদের ওপর স্পার্টানদের কঠোর শাসন এবং নিপীড়নের কারণে তারা বেশ কয়েকবার বিদ্রোহ করেছিল। তবে, স্পার্টানরা এই বিদ্রোহগুলো দমন করতে সক্ষম হয়েছিল।
এই জাতি স্পর্টার পতনের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছিলো। খ্রিস্টপূর্ব ৩৭১ অব্দে লুক্ট্রার যুদ্ধে গ্রিসের আরেক নগর রাষ্ট্র থিবসের কাছে স্পার্টার ভূমিধস পরাজয় ঘটে। পরে থিবসিয়ান জেনারেল এপামিনোনডাস স্পর্টার ভূমিদাস হেলটদের স্বাধীনতা প্রদান করেন।