সাতসতেরো

বোয়েতিয়ান লীগের যে কৌশলের কাছে হেরে যায় স্পার্টা

লুক্ট্রা ছিল প্রাচীন বোয়েটিয়া অঞ্চলের একটি গ্রাম। যা থেসপিয়াই থেকে প্লাটাইয়া যাওয়ার পথে অবস্থিত। এই গ্রামটি যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে এবং স্পার্টানদের পতনের ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত। বোয়েতিয়ান লীগের কাছে ভূমিধস পরাজয় হয়েছিলো স্পার্টানদের। বোয়েতিয়ান লীঘ ছিল মূলত বিভিন্ন নগর-রাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক ও সামরিক জোট। সে সময় সবচেয়ে বড় নগর রাষ্ট্র হিসেবে থিবিস স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বড় সৈন্যদল সরবরাহ করত।

লুক্ট্রার যুদ্ধ ৩৭১ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ৬ই জুলাই তারিখে হয়েছিলো। এই যুদ্ধ স্পার্টার দীর্ঘদিনের সামরিক আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে থিবসকে নতুন শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই যুদ্ধটি থিবীয় সেনাপতি এপামিনোন্ডাসের উদ্ভাবনী সামরিক কৌশলের জন্য বিখ্যাত। থিবস ও বোয়েসিয়ান লীগ এর নেতৃত্ব ছিলেন এপামিনোন্ডাস এবং পেলোপিদাস। 

এপামিনোন্ডাসের উদ্ভাবনী কৌশল ঐতিহ্যগতভাবে, গ্রীক ফ্যালানক্স বা পদাতিক বাহিনী ১২ সারিতে দাঁড়াতো। তাদের সেরা সৈন্যরা ডানদিকে অবস্থান করত। কিন্তু এপামিনোন্ডাস প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে দুটি যুগান্তকারী কৌশল অবলম্বন করেন।  তিনি তার সেরা সৈন্যদেরবাম পাশে স্থাপন করেন এবং এই ফ্যালানক্সকে ৫০ সারিতে দাঁড় করান। 

তিনি তার সেনাবাহিনীকে দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর করান। তার শক্তিশালী বাম পার্শ্ব দ্রুত অগ্রসর হয়, যখন বাকি লাইনগুলি ধীরে ধীরে এগোয়। এর ফলে মূল আক্রমণটি সরাসরি স্পার্টানদের সবচেয়ে শক্তিশালী ডান পার্শ্বের ওপর কেন্দ্রীভূত হয়। 

থিবানদের গভীর এবং কেন্দ্রীভূত আক্রমণ স্পার্টানদের ডান পার্শ্বকে ভেঙে দেয়। যুদ্ধে স্পার্টার রাজা ক্লিওমব্রোটাস নিহত হন। এটি ছিল প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো যুদ্ধে স্পার্টান রাজার মৃত্যু।এই বিজয়ের মাধ্যমে স্পার্টার শত বছরের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব এবং গ্রীক উপদ্বীপের ওপর তাদের বিশাল প্রভাব চূর্ণ হয়ে যায়।

থিবস গ্রীসের প্রধান সামরিক শক্তিতে পরিণত হয় এবং একটি স্বল্পকালীন সময়ের জন্য গ্রীক রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেন। এপামিনোন্ডাসের উদ্ভাবিত কৌশলগুলো পরবর্তীকালে ম্যাসিডনের দ্বিতীয় ফিলিপ এবং তার পুত্র মহাবীর আলেকজান্ডার যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করে বিশ্বজয়ে সফল হয়েছিলেন। লুক্ট্রার যুদ্ধ গ্রীক নগর-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতার ভারসাম্যকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছিল।