ওপার বাংলার ‘ভালোবাসার মরশুম’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন অভিনেত্রী তানজিন তিশা। সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অগ্রিম পারিশ্রমিকও নেন এই অভিনেত্রী। পরবর্তীতে এ সিনেমা থেকে বাদ পড়েন এই অভিনেত্রী। তবে সিনেমাটির প্রযোজক শরীফ খান গণমাধ্যমে দাবি করেন—“সিনেমাটি থেকে বাদ পড়ার পর তিশা অগ্রিম নেওয়া পারিশ্রমিকের অর্থ ফেরত দিচ্ছেন না।”
গত কয়েক দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর চর্চা চলছে। একটি গণমাধ্যমে বিষয়টিকে ‘ফালতু’ বলে মন্তব্য করেন তিশা। এ নিয়ে ফেসবুকে অফিসিয়াল একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন এই অভিনেত্রী। তাতে এসব অভিযোগগুলোকে ‘পুরোপুরি মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন তিশা।
এ বিবৃতিতে তানজিন তিশা বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় পরিচালক এম. এন. রাজে সাথে আমার ‘ভালোবাসার মরশুম’ সিনেমাটি করার কথা ছিল, সে বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে, যা আদতে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রটানো।”
চুক্তির বিষয়টি স্মরণ করে তানজিন তিশা বলেন, “প্রথমত আমি যখন সিনেমাটিতে সাইন করি, আমার আইনজীবীর মাধ্যমে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করি। সেখানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ ছিল, ‘আমার বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কিত যাবতীয় দায়িত্ব ডিরেক্টর এবং প্রোডিউসারের। অর্থাৎ ভিসা করানো, ফ্লাইটের জন্য টিকিট এবং সেখানে থাকা-খাওয়ার সকল দায়-দায়িত্ব তাদের।’ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার, তারা আমার ভিসা করিয়ে দিতে পারেনি। এমনকি, আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করেছি কিন্তু ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হই।”
ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা সম্পূর্ণ পরিচালকের দায়িত্ব বলে জানান তিশা। তার পরিষ্কার বক্তব্য—“ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা যেহেতু চুক্তিপত্র অনুযায়ী ডিরেক্টরের দায়িত্ব, তাই এই বিষয়ের জন্য আইন অনুযায়ী কোনো দায় আমার হতে পারে না। এটি ডিরেক্টরের ব্যর্থতা।”
পরের ঘটনা বর্ণনা করে তানজিন তিশা বলেন, “ওই সময়ে ২ মাস ভিসার জন্য অপেক্ষা করেছি এবং এর মধ্যে ভিসা হয়নি। ফলে এর মধ্যে তারা অন্য একজনকে আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ রুলের জন্য ইনক্লুড করে এবং তাকে দিয়ে অভিনয় করায়। আমি তার পরবর্তী সময়ে এসে বাংলাদেশের একটি সিনেমাতে চুক্তিবদ্ধ হই, যা বর্তমানে শুটিং চলমান।”
‘ভালোবাসার মরশুম’ সিনেমা থেকে সরে আসার বিষয়ে তানজিন তিশা বলেন, “একটি সিনেমা আমার জন্য আমার পেশাগত সম্মানের একটি জায়গা, যা আমি কখনো নষ্ট করতে চাইনি বা চাইব না। কিন্তু যেহেতু পরিচালক তার ব্যর্থতার জন্য শিডিউল অনুযায়ী কাজ শুরু করতে পারেননি এবং নতুন একজনকে সেখানে চুক্তিবদ্ধ করে নিয়েছেন, তাই বাধ্য হয়েই আমাকে সেখান থেকে সরে আসতে হয়েছে।”
শরীফ খান ‘ভালোবাসার মরশুম’ সিনেমার প্রযোজক দাবি করে তিশার বিরুদ্ধে অর্থ-আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন। তবে তিশা তাকে লাইন প্রোডিউসার বলে উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে তানজিন তিশা বলেন, “কিন্তু লাইন প্রোডিউসার শরিফ এখন একবার আমাকে বলছে, এক-তৃতীয়াংশ টাকা ফেরত দিতে, আবার আমার আইনজীবীকে বলছে কিছু টাকা ফেরত দিলেই হবে আবার সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে আমার ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে, যা একটি অপচেষ্টা মাত্র।”
চুক্তি অনুযায়ী অগ্রিম পারিশ্রমিকের অর্থ ফেরত পান না সিনেমাটির প্রযোজক। এ বিষয়ে তানজিন তিশা বলেন, “আমার সাথে যে চুক্তিপত্র হয়েছে, সেখানে ডিরেক্টর ফল্টের কারণে কোনো প্রবলেম হলে আমাকে টাকা ফেরত দিতে হবে এমন কোনো ক্লজ নেই। আমি সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন মানুষ, আইন-আদালতে যদি তারা প্রমাণ করতে পারে যে আমি টাকা ফেরত দিতে বাধ্য এবং আদালত এমন নির্দেশনা প্রদান করেন তাহলে আমি অবশ্যই তা মেনে নিবো এবং টাকা ফেরত দিব।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তানজিন তিশা বলেন, “যেসব সাংবাদিক ভাইয়েরা না জেনে কিংবা ভুল তথ্য জেনে আমার সাথে কথা না বলেই প্রচার করছেন এবং যেসব সাংবাদিক ভাইয়েরা আমার সত্যটা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, ‘আপনারা সবটুকু জেনে সত্যটাই প্রকাশ করবেন, আমি এইটুকু আপনাদের কাছে আশা করতে পারি।”
প্রযোজক শরীফ খান দাবি করেছেন, প্রথমে ৩০ হাজার রুপি পরে তিশার বোনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে তিশার আইনজীবী জসীম উদ্দিন গণমাধ্যমে বলেন, “তানজিন তিশা চুক্তি অনুযায়ী তার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে পালন করেছেন। তিনি শিডিউল প্রদান করেছেন এবং কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু ডিরেক্টর ভিসা এবং শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে চুক্তির সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ অনুযায়ী ডিরেক্টরের ডিফল্ট (অপরাধ) স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিশার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আর্টিস্ট ডিফল্ট ঘটেনি। বরং ভিসা বিলম্ব ও শিডিউল বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে তিশাই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”