মাত্র দুই দিনে শেষ হয়ে যাওয়া পার্থ স্টেডিয়ামের অ্যাশেজ টেস্টের পিচকে সর্বোচ্চ রেটিং দিয়েছে আইসিসি। ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মাদুগালের জমা দেওয়া অফিসিয়াল প্রতিবেদনে পিচটিকে “ভেরি গুড” বা ‘অতীব ভালো’ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
প্রথম দিনেই এই উইকেটে পড়েছিল ১৯টি উইকেট। আর দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে ট্রাভিস হেডের ৮৩ বলে ১২৩ রানের তাণ্ডবে ম্যাচ গড়ায় একেবারে চূড়ান্ত পর্বে। আইসিসির চার স্তরের রেটিং ব্যবস্থায় ‘ভেরি গুড’ মানে হলো- বোলার-ব্যাটসম্যানের লড়াইয়ে ভারসাম্যপূর্ণ একটি উইকেট; যেখানে প্রথম দিকে বল ভালো ক্যারি করবে, সীম নড়াচড়া সীমিত থাকবে, আর বাউন্সও থাকবে ধারাবাহিক।
মাত্র ৮৪৭টি বল খেলেই ম্যাচটি শেষ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এটিই দ্বিতীয় সবচেয়ে ছোট মেয়াদের সম্পন্ন হওয়া টেস্ট। আর ১৮৮৮ সালের পর সবচেয়ে স্বল্প বলের অ্যাশেজ ম্যাচ।
প্রথম তিন ইনিংসজুড়েই দাপট দেখিয়েছেন পেসাররা। মিচেল স্টার্ক নিয়েছেন ৭ উইকেট ৫৮ রানে। তবে ইংল্যান্ড প্রথম দিন টি-ব্রেকে যাওয়ার আগে ১৬০/৫ অবস্থায় ছিল। এরপরই তাদের ভয়াবহ ধস। জবাবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংও ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়; দিনের শেষে তারা ছিল ৯ উইকেটে ১২৩। যেখানে বেন স্টোকস একাই নেন পাঁচ উইকেট।
দ্বিতীয় দিনে ইংল্যান্ড ৯ উইকেট হাতে রেখেও লিড বাড়িয়ে ১০৫ করেছিল। কিন্তু স্কট বোল্যান্ডের একঝাঁক দারুণ স্পেলে ভেঙে পড়ে মিডল অর্ডার।
২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একেবারে ইউ-টার্ন নেয় ম্যাচ। আহত উসমান খাওয়াজার বদলে ওপেন করতে নেমে ট্রাভিস হেড ঝড় তোলেন। আর মাত্র ২৯ ওভারেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। উইকেট তখন ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ অনুকূল হয়ে উঠেছিল। গত বছর ভারতের বিপক্ষে টেস্টেও এমনটাই হয়েছিল। প্রথম দিনের ধসের পর পরে ব্যাটিং সহজ হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথও ম্যাচ শেষে বলেন, “দিনের শেষ দিকে এই উইকেটটা আরও ভালো হয়ে ওঠে। আজ সন্ধ্যায় ব্যাটিংয়ের জন্য একেবারে উপযুক্ত অবস্থায় ছিল। গত বছরও আমরা একই ধরনের আচরণ দেখেছি।”
ঠিক তার আগেই কলকাতায় ভারত–দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যেকার আরেকটি দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া কম রানের ম্যাচের পিচ নিয়ে বড় বিতর্ক উঠেছিল। তবে সেই পিচের রেটিং এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
পার্থ টেস্টের আগেভাগে শেষ হয়ে যাওয়া ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার জন্য বেশ ব্যয়বহুল হয়েছে। ক্ষতি ধরা হচ্ছে প্রায় ৩০–৪০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চিফ অব ক্রিকেট জেমস অলসপ বলেন, “ম্যাচ রেফারির ‘ভেরি গুড’ রেটিং আমাদের বিশ্বাসকে আরও শক্ত করে। পার্থ স্টেডিয়ামের উইকেটটি ব্যাট–বল লড়াইয়ে প্রকৃত ভারসাম্য তৈরি করেছিল। দুই দলের দুর্দান্ত পেসারদের লড়াই আর উত্তেজনার কারণেই ম্যাচ মাত্র দুই দিন স্থায়ী হয়।
দিন তিন ও চার-এর টিকিটধারীদের জন্য এটা হতাশার হলেও আমরা কিছু অবিশ্বাস্য মুহূর্ত দেখেছি, যা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে এবং নতুন প্রজন্মকে ক্রিকেটে অনুপ্রাণিত করবে।”
তিনি আরও বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি মাঠের পিচ যেন নিজেদের স্বতন্ত্র চরিত্র ধরে রাখে। আমরা সেটাই চাই। বৃহস্পতিবার গাব্বায় শুরু হতে যাওয়া ডে-নাইট টেস্টেও দারুণ লড়াই আশা করছি।”
আগামী সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া ব্রিসবেন টেস্টের উইকেট নিয়েও কৌতূহল রয়েছে। তবে কিউরেটর ডেভ সানডুরস্কি আত্মবিশ্বাসী পিচে ন্যায্য ভারসাম্যই থাকবে। তিনি বলেন, “এখন গরম একটু বেশি। তাই উইকেট দ্রুত শুকিয়ে যায়। পাঁচ দিন স্থায়ী করার জন্য যথেষ্ট আর্দ্রতা রাখতে হয়। চার-দিন বা পাঁচ-দিনের ক্রিকেট সবক্ষেত্রেই আমরা একই ধরনের উইকেট তৈরির চেষ্টা করি। যাতে ব্যাটসম্যান–বোলার সবাই নিজের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ পায়।”
২০২২-২৩ মৌসুমে গাব্বায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র দুই দিনে শেষ হওয়া টেস্টের পিচ “বেলো অ্যাভারেজ” রেটিং পেয়েছিল এবং একটি ডিমেরিট পয়েন্টও যোগ হয়েছিল। তবে এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ভারতের বিপক্ষে হওয়া টেস্টগুলোতে আর কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।
২০২৩-২৪ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হওয়া ম্যাচটিই বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র হারা ডে-নাইট টেস্ট। ভারতের বিপক্ষে গত বছরের ম্যাচটি আবার বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছিল।