একাদশে ফেরা শেখ মাহেদীর ট্রেড মার্ক, কাভারের ওপর দিয়ে ইনসাইড আউট শট। টাইমিং মিলল। বল গড়িয়ে গেল বাউন্ডারিতে। আয়ারল্যান্ডের দেওয়া ১৭১ রানের টার্গেটে পৌঁছতে ১ রান হলেই হতো। বাউন্ডারি মেরে মাহেদী আত্মবিশ্বাস দেখালেন। স্বস্তি ফিরল ড্রেসিংরুমে। হাসি ফিরল ডাগ আউটে।
ঘরের মাঠে দেড়শতম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। শনিবার আয়ারল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-১ এ সমতা ফিরিয়েছে। চট্টগ্রামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩৯ রানে হেরেছিল দল।
ধ্রুপদী ক্রিকেটে দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ে ফিরল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে এটি চার ম্যাচ পর প্রথম জয় লিটন অ্যান্ড কোংদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর আইরিশদের কাছেও হেরেছিল। অবশেষে স্বস্তির জয়। সঙ্গে দেড়শ জয়ের স্বাদ। সবই সমীকরণ মিলল চট্টগ্রামে।
১৯৮৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় বাংলাদেশের। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৬৬ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। শনিবার আইরিশদের হারিয়ে পেল দেড়শতম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের স্বাদ। এ সময়ে ম্যাচ হেরেছে ১৯৬টি। ১৪টি ড্র। ফল হয়নি ৫ ম্যাচে। ১টি টাই।
ম্যাচে জয়ের নায়ক অধিনায়ক লিটন দাস। ৩৭ বলে ৫৭ রান করেছেন তিনি। লক্ষ্য তাড়ায় পারভেজ হোসেন ইমন ঝড়ো শুরু এনে দেন। ২৮ বলে ৪৩ রান করেন ৫ চার ও ২ ছক্কায়। তিনে নেমে লিটন ৩টি করে চার ও ছক্কায় জয়ের কাজটা সহজ করে দেন। তার সঙ্গে ১৭ বলে ২২ রান করেন সাইফ হাসান।
কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতনে বাংলাদেশ শিবিরে শুরু হয় অস্তিরতা। সহজ ম্যাচ কঠিন বানিয়ে ফেলেন তাওহীদ, সোহানরা। ৮ উইকেটে ৩১ বলে দরকার ৩৩ রান। সেখান থেকে ম্যাচ গড়ায় শেষ ওভারে। দ্রুত ৪ উইকেট তুলে আইরিশরা জয়ের সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিল। কিন্তু সাইফ উদ্দিন ক্রিজে এসে সব হিসেব পাল্টে দেন। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৭ বলে ১৭ রান করেন ২ চার ও ১ ছক্কায়। কাভারের ওপর দিয়ে তার মারা ছক্কাটা দিনের সেরা শট হবে নিশ্চিতভাবেই।
তিন ফরম্যাট মিলিয়ে দেড়শ জয়ের পাশাপাশি ঘরের মাঠে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও গড়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ২০২৪ সালের মার্চে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭০ রান করে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। আজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আরো ৪ রান বেশি করে ম্যাচ জিতেছে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও আছে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আয়ারল্যান্ডের শুরুটা ছিল আগের ম্যাচের মতোই আগ্রাসী। পাওয়ার প্লে’তে তাদের রান আসে ৭৫। প্রথম ১০ ওভারে তুলে নেয় ৯৭ রান। মনে হচ্ছিল প্রথম ম্যাচের ১৮১ রান ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের দারুণ কামব্যাকে শেষ ১০ ওভারে ৭৩ রানের বেশি তুলতে পারেননি অতিথিরা।
মাহেদীকে প্রথম ওভারে তিনটি চার মারেন টিম টেক্টর। পরের ওভারে নাসুম এসে হজম করেন চার ও ছক্কা। সেটা মারেন পল স্টার্লিং। সাইফ উদ্দিনের শুরুটাও ভালো হয়নি। স্টার্লিং তাকে দুটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান। আইরিশ অধিনায়ককে চতুর্থ ওভারে থামান তানজিম হাসান। ১৪ বলে ২৯ রান করেন তিনি।
পাওয়ার প্লে’ শেষে বাংলাদেশকে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরান মাহেদী। নবম ওভারে দুই ভাই টিম টেক্টর ও হ্যারি টেক্টরকে আউট করেন। ১১তম ওভারে মাহেদীর তৃতীয় শিকার হন বেন কালিটস। দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে রানের গতিও কিছুটা হারিয়ে ফেলে আইরিশরা।
সেখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে জর্জ ডকরেল ও লরকান টাকার ৪৪ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন। তবে তাদেরকে হাত খুলে মারতে দেননি বোলাররা। লরকান টাকার ৩২ বলে করেন ৪১ রান। ডকরেল ২১ বলে ১৮ রান করেন। ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মাহেদী। ১টি করে উইকেট নেন তানজিম ও সাইফ উদ্দিন।
২ ডিসেম্বর এই মাঠেই দুই দল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে। কার মুখে হাসি ফোটে সেটাই দেখার।