সারা বাংলা

খুলনায় আদালত পাড়ায় জোড়া খুন: ৪ বিষয় সামনে রেখে তদন্তে পুলিশ

খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান ফটকের সামনে দুই শীর্ষ অপরাধী  হাসিব হাওলাদার এবং ফজলে রাব্বি রাজন হত্যার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তা জোড়া খুনের পিছনে চারটি সম্ভাব্য কারণ যাচাই করছেন।  

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো মামলা করা হয়নি। এখনো পর্যন্ত সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার হয়নি।

রবিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনার আদালত পাড়ায় সন্ত্রাসীদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে ফজলে রাব্বি রাজন ও হাসিব হাওলাদার নিহত হয়। তারা মামলার আসামি হয়ে আদালতের শুনানিতে হাজিরা দিতে আসেন।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম সোমবার (১ ডিসেম্বর) বলেন, ‘‘পরিবারের পক্ষ থেকে না করলে পুলিশ অভিযোগকারী হিসেবে মামলা করবে। এখনো কোনো সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার হয়নি।’’

খুলনার নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দুই শীর্ষ চরমপন্থি নেতা নাসিমুল গণি ওরফে নাসিম এবং আরমান শেখ ওরফে আরমিন হাইকোর্টের জামিনে মুক্তি পাওয়ার মাত্র দুই দিন পরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। উভয়ই দৌলতপুরভিত্তিক অপরাধী ‘টাইগার খোকন’ হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। জোড়া খুনের পর থেকে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন।

নাসিমুল গণি ওরফে নাসিম এবং আরমান শেখ ওরফে আরমিন কারাগার থেকে মুক্তির পর খুলনার অপরাধ জগতে অস্থিরতা বেড়েছে। খুলনায় বর্তমানে সাতটি বড় গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী চরমপন্থি এবং অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্যের লড়াইয়ের অংশ হিসেবে আরো আক্রমণ চালাতে পারে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা আশংকা করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘রবিবারের (৩০ নভেম্বর) ঘটনার সময় আদালতে কর্তব্যরত পুলিশের কাছে কেবল লাঠি ছিল, আগ্নেয়াস্ত্র নয়। যার ফলে হস্তক্ষেপ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অপরাধীদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়।’’

পুলিশ জানায়, কুখ্যাত গ্যাং লিডার ‘রনি চৌধুরী বাবু ওরফে গ্রেনেড বাবু গ্রুপ’ এই জোড়া খুনে জড়িত। খুলনা কারাগারে বাবুর সমর্থকদের সঙ্গে পলাশ গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার সময় রাজন ও হাসিব কারাগারে ছিল এবং সংঘর্ষে অংশ নেয়। এর প্রতিশোধ নিতে জোড়া খুনের হামলা হতে পারে।

তদন্ত কর্মকর্তারা চারটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছেন। এগুলো হলো, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরবর্তী রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পরিবর্তনের পর মাদক নেটওয়ার্কের প্রতিদ্বন্দ্বিতা; চাঁদাবাজি নিয়ে বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার; বাবু গ্রুপ এবং পলাশ অনুসারীদের মধ্যে সম্প্রতি কারাগারে সংঘর্ষের প্রতিশোধ এবং সোনা, অস্ত্র এবং মাদক চোরাচালানের রুট নিয়ে প্রতিযোগিতা।

কেএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ত. ম. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘‘খুলনার অপরাধ জগত একাধিক উপদলের মধ্যে বিকশিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পলাশ গ্রুপ, গ্রেনেড বাবু গ্রুপ, নূর আজিম গ্রুপ, হুমা, আরমিন এবং নাসিমের নেতৃত্বে উগ্রপন্থি গোষ্ঠী। নাসিম এবং আরমিনের মুক্তির পর তাদের কার্যক্রম পুনরায় সক্রিয় করেছে।’’

জোড়া খুনের তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ আইনজীবী এবং পথচারীদের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।’’