রাজশাহীর পর্যটন মোটেলে এনসিপির জেলা কমিটির পরিচিত সভার সম্প্রচার বন্ধ না করলে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সোয়েব আহমেদ। পরে সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে পড়ে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে মোটেলের সম্মেলন কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সোয়েব আহমেদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ওঠে। এরমধ্যে রাজশাহী নগরের আসাম কলোনিতে দুই নারীকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনাতেও তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। সেই ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
বর্তমানে সোয়েব আহমেদ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজশাহী মহানগরের কয়েকজন নেতার সঙ্গে চলাফেরা করেন।
সাংবাদিকদের বক্তব্য অনুযায়ী, শনিবার (২৯ নভেম্বর) এনসিপির রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পর দিন রবিবার (৩০ নভেম্বর) এক সদস্য পদত্যাগ করেন। ওই দিন রাতে কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা সংবাদ সম্মেলন করে নতুন আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামকে আওয়ামী দোসর আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করেন। এ সব উত্তেজনার মধ্যে সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা কমিটির পরিচিতি সভার আয়োজন করা হয়, যেখানে খবর সংগ্রহে যান সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে কমিটির আরো পাঁচ সদস্য মোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন। সাংবাদিকরা তখন সাইফুল ইসলামের বক্তব্য নিতে ভেতরে প্রবেশ করেন। সাইফুল ইসলাম কথা বলার সময় কেউ কেউ সরাসরি সম্প্রচার করছিলেন। ঠিক সেই সময় সোয়েব আহমেদ আরেকজনকে নিয়ে সভাকক্ষে ঢুকে বলেন, “এখনই সাংবাদিকরা বেরিয়ে যান, না হলে সবাইকে তালা মেরে দেওয়া হবে।”
তিনি আরো কিছু আপত্তিকর মন্তব্যও করেন। এতে সাংবাদিকরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে সোয়েব দ্রুত বাইরে বেরিয়ে যান। সাংবাদিকরাও পেছনে গিয়ে তাকে ঘিরে ধরে হুমকির প্রতিবাদ করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে, আর সোয়েব তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে।
এর আগে পরিচিতি সভা চলাকালে সোয়েবসহ কয়েকজন ‘অ্যাকশন, অ্যাকশন; ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিয়ে মোটেলের ভেতরে প্রবেশ করেন। এতে মোটেলের কর্মীরা জানান, ভেতরে ৫৩ জন অতিথি আছেন এবং এমন স্লোগানে আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে। পরে তারা বাইরে গিয়ে স্লোগান চালিয়ে যেতে থাকেন।
এনসিপির মহানগর আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলী বলেন, “ছেলেটা আমাদের সঙ্গে চলে, কিন্তু দলের কোনো পদে নেই। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন। বয়স কম, তাই এমন কথা বলে ফেলেছেন। আসলে জেলার আহ্বায়ক সাইফুলকে নিয়ে তাদের ক্ষোভ আছে।’’
আওয়ামী সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে এনসিপির জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমার কোনো আওয়ামী সম্পৃক্ততা নেই। আগে আমি জিয়া পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। পরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হই। এরপর এনসিপিতে এসেছি। আমি আসলে সংস্কারের পক্ষে থাকতে চেষ্টা করেছি সব সময়।”