গুমের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নির্দেশে অধ্যাদেশ জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সোমবার রাতে অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। জারি করা গেজেটে গুমের ধরন ও শাস্তি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে আইন ও বিধিবিধান তুলে ধরা হয়েছে।
দেশের সংবিধানে ব্যক্তির সুরক্ষার অধিকার এবং গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে নাগরিকের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকারের ভিত্তিতে গুম প্রতিরোধ ও গুমের মতো জঘন্য অপরাধের সাজা নিশ্চিত করতে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে বলে গেজেটে বলা হয়েছে।
গুমের সাজার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা অন্য কোনো কর্মকর্তা অথবা ব্যক্তি যদি কাউকে অবৈধভাবে আটক, গ্রেপ্তার বা অপহরণ করেন; গুমের তথ্য গোপন করেন বা আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই ধরনের দোষ প্রমাণ হলে অপরাধীর সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন বা অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। একই সঙ্গে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা হবে।
অবশ্য গেজেটের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার করে আইনে বর্ণিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার আগ পর্যন্ত যদি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ওই সময়ের তথ্য গোপন রাখা হয়, তাহলে তা গুম হিসেবে গণ্য হবে না।
গুমের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গেজেটে বলা হয়েছে, গুমের শিকার কোনো ব্যক্তির যদি মৃত্যু হয় বা তার লাশ পাওয়া যায় অথবা গুমের পর পাঁচ বছরেও যদি তার খোঁজ না পাওয়া যায়; তাহলে দোষীর প্রাণদণ্ড, যাবজ্জীবন বা অন্য কোনো মেয়াদে দণ্ড হবে। এই দণ্ড ছাড়াও অপরাধীর ১ কোটি টাকা জরিমানা হবে।
গেজেটে বলা হয়েছে, গুমের আলামত নষ্ট, বিকৃত বা পরিবর্তন করলে সাত বছরের দণ্ড ও সঙ্গে ২০ লাখ টাকা জরিমানা হবে।
কোনো ব্যক্তি গোপন আটক-কেন্দ্র নির্মাণ, স্থাপন বা ব্যবহার করলে তারও অনধিক সাত বছরের দণ্ড এবং সেই সঙ্গে ২০ লাখ টাকা জরিমানা হবে।
দণ্ডের পরিধির মধ্যে আরো রয়েছে গুমে ইন্ধন, সহায়তা, অনুমতি, প্ররোচণার মতো অপরাধ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধ্বস্তনদের এরূপ আদেশ-নির্দেশ দিলে বা বাধ্য করলেও আইনে বর্ণিত সমরূপ সাজা ভোগ করবেন তারা।
গুমের অভিযোগ আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কয়েকটি মামলা গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগের শাসন আমলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সামরিক ও বেসামরিক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নামে মামলা চলছে।
৬ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন, গুমের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড রেখে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। সেই অধ্যাদেশ সোমবার রাতে প্রকাশ করা হলো।