আন্তর্জাতিক

ভারতে দুটি ট্রলারসহ ২৮ বাংলাদেশি জেলে আটক

ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ার অভিযোগে রবিবার (৩০ নভেম্বর) পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে দুটি বাংলাদেশি ট্রলারকে আটক করেছে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী। যাদের একটি ট্রলারে ছিলেন ১৫ জন মৎস্যজীবী (জেলে)। অন্য একটি ট্রলারে ছিলেন ১৩ জন, যারা দীর্ঘ ১৫ দিন যাবৎ সমুদ্রে অভুক্ত অবস্থায় ভাসছিলেন। 

পশ্চিমবঙ্গে ১৫ জন আটকের ঘটনায় জানা গেছে, রবিবার রাতে ‘এফ বি আল্লাহ মালিক’ নামে একটি বাংলাদেশি ট্রলার ভারতীয় জলসীমা অতিক্রম করে ঢুকে মাছ ধরছিল বলে অভিযোগ। ট্রলারটিকে দেখে উপকূল রক্ষী বাহিনীর সন্দেহ হয়। তখনই তারা মৎস্যজীবীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। পরে তাদের নথি যাচাই করে বাংলাদেশি ওই ট্রলারটিকে আটক করা হয়। 

সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানার হাতে মৎস্যজীবীদের তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশি মৎস্যজীবীরা সবাই সুস্থ রয়েছেন। 

অন্যদিকে অন্ধ্রপ্রদেশে ১৩ জন আটকের ঘটনায় জানা গেছে, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার এচেরলা মণ্ডলের মোসাভানিপেটা উপকূলের কাছে এই বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের গ্রেপ্তার করে শ্রীকাকুলাম জেলার উপকূলীয় নিরাপত্তা পুলিশ। 

প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে, বাংলাদেশের ভোলা জেলার ১৩ জন মৎস্যজীবী সমুদ্রে মাছ ধরতে বের হয়। কিন্তু সমুদ্রে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভুলবশত সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে মাছ ধরার ট্রলার সহ ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ে। 

রবিবার স্থানীয় জেলেরা মোসাভানিপেটা উপকূলের কাছে তাদের নৌকা নোঙর করার পর বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের দেখতে পান এবং তারা স্থানীয়দের কাছে সাহায্য চান। এরপর স্থানীয়রা আটকে পড়া মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করে তাদের খাবার, পানি, ওষুধ সরবরাহ করেন এবং সেই সঙ্গে পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়। 

খবর পেয়ে উপকূলে ছুটে যান মেরিন পুলিশ সার্কেল ইন্সপেক্টর পি. প্রসাদ রাও এবং স্থানীয় সাব-ইন্সপেক্টর জি. লক্ষ্মণ রাও সব পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা। 

প্রাথমিকভাবে তাদের ভাষা ও পরিহিত পোশাক দেখে বাংলাদেশি বলে শনাক্ত করা হয়। ভাষাগত সমস্যার কারণে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অসুবিধা হয় পুলিশ কর্মকর্তাদের। যদিও স্থানীয় কয়েকজন মৎস্যজীবীর বাংলা ভাষায় দখল থাকার কারণে সেই বাংলাদেশিদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় পুলিশ। জানা যায়, মাঝ সমুদ্রে আটকে পড়ে গত প্রায় ১৫ দিন ধরে তারা অভুক্ত ছিলেন। 

পরে উপকূলীয় নিরাপত্তা পুলিশ বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের আটক করে পরবর্তী তদন্তের জন্য কলিঙ্গপত্তনম পুলিশ থানায় স্থানান্তরিত করে। পুলিশ জানিয়েছে, অনুভূতি ছাড়া যেহেতু তারা ভারতীয় সীমানায় ঢুকে পড়ে, তাই তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

আটক জেলেরা হলেন- সজীব (২১), জাহাঙ্গের (৩৫), সাব্বির (২৫), কোকন (৩২), মাকসুদ (৪০), মালিক (৮০), মো. ফারুক (৫৫), মাকসুদ (৫০), নাসির (৬৫), হেলাল (২৮), ফারুক (৫০), আলম (৪৬) ও সামেম (২১)। এরা সকলেই বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার বাসিন্দা। 

কলিঙ্গপত্তনম মেরিন সার্কেল ইন্সপেক্টর বি প্রসাদ রাও বলেন, “আমরা শ্রীকাকুলামের এচেরলা মণ্ডলের অন্তর্গত মুসাভানিপেটা উপকূলীয় গ্রামের কাছে ভারতীয় সামুদ্রিক অঞ্চলে নোঙর করা একটি সন্দেহজনক ট্রলারকে শনাক্ত করেছি। আমরা জানতে পেরেছি যে মৎস্যজীবীরা বাংলাদেশের এবং তাদের ট্রলারে কারিগরি ত্রুটির কারণে তারা আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমানা (আইএমবিএল) অতিক্রম করেছিল।” 

তিনি আরো জানান, “গত কয়েকদিন ধরে খাবারের অভাবে শারীরিকভাবেও তারা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আমরা তাদের আটক করেছি এবং প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করেছি। পরে মেরিন থানায় স্থানান্তরিত করেছি।” 

“আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরও অবহিত করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব”, বলেও জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। 

সূত্রে খবর, আটকের বিষয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকেও জানানো হবে।