জাতীয়

আসন্ন নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অ্যাসিড টেস্ট: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় পরীক্ষা বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, “নির্বাচনে পরাজিত ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।”

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রংপুর জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন। খবর বাসসের।

তৌহিদ হোসেন বলেন, “দেশের সবকিছুর ভিত্তি আইনশৃঙ্খলা। শুরুতে সমস্যা থাকলেও এখন অবস্থা ভালো। পুলিশ গুছিয়ে উঠে নিজেরা সংহত হতে পেরেছে। সামনে নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় টেস্ট (পরীক্ষা)। কেননা অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, সামনের নির্বাচন একটি আদর্শ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “পুলিশ ইতোমধ্যেই তাদের অবস্থান সুসংগঠিত করেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, আমাদের অ্যাসিড টেস্ট। নির্বাচনে পরাজিত ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। আমরা চাই, ভালো একটা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব দিয়ে চলে যেতে।”

তৌহিদ হোসেনের মতে, “দুটো সেক্টরে (খাতে) বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। বাইরের দেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু আমরা পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি। ডাক্তার, নার্সের সমস্যা নিরসনের অংশ হিসেবে (অন্তর্বর্তী সরকারের) এই স্বল্প সময়ে সাড়ে ৩ হাজার নার্স ও ৩ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই খাতে বাজেট বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছর তা দেখা যাবে। আমরা কিছু প্রকল্প শুরু করেছি। আশা করছি, পরের সরকার তা ধরে রাখবে।”

প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেশের প্রাথমিক শিক্ষার খুব বাজে অবস্থা। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা প্রাইমারি শিক্ষকদের অনেক বেশি বেতন দিই, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো কর্মস্পৃহা দেখতে পাই না।”

মানবসম্পদ রপ্তানির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “বিদেশে গেলে অবশ্যই দক্ষ হিসেবে যেতে হবে, না হলে বেতন কম। আমাদের দেশের মানুষ দক্ষ হয়ে বিদেশে যায় না, যার কারণে কম বেতন পায়। বিদেশে অসংখ্য নার্সের পদ খালি রয়েছে। নার্স হিসেবে বিদেশে গেলে ভালো বেতন পাওয়া সম্ভব। বিদেশ যাওয়ার জন্য কর্মীদের সরকারিভাবে যে দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, বাইরের দেশগুলোতে সেসব কাজের তেমন কোনো চাহিদা নেই। তাই দক্ষ করে জনশক্তি রপ্তানি করা গেলে দেশের জন্য ভালো।”

এ সময় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা স্কিলড ম্যানপাওয়ার (দক্ষ জনশক্তি) তৈরি করতে চাই। আপনারা যেসব কর্মকর্তারা এখানে রয়েছেন, রংপুর অঞ্চলের মানুষকে বিভিন্ন দেশের ভাষায় দক্ষ করে তুলুন, তাহলেই তারা ভবিষ্যৎ ভালো করতে পারবে।”

দেশের কৃষির উন্নয়ন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর জন্য সরকার কাজ করছে। যেহেতু রংপুর কৃষিপ্রধান অঞ্চল, তাই এই অঞ্চলের কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান, সে ব্যাপারে আমরা সর্বদাই কাজ করে যাচ্ছি। তিস্তার বিষয়ে আমি এখান থেকে গিয়ে সরকারকে জানাব। কারণ, তিস্তার চরাঞ্চলে ভালো ফসল হয়, সে ব্যাপারে যাতে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া হয়।”

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসানের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মারুফাত হুসাইন, সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু ছাইদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

চার দিনের সফরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রংপুরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনা পরিদর্শন করেন।