ভ্রমণ

নাইজেরিয়ায় বোকো হারামের ইসলামি রাষ্ট্র

তৈয়বুর রহমান : অবশেষে বোকো হারাম তাদের দখল করা অঞ্চলকে ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে। বোকো হারাম নেতা আবু বকর শেকাউ এক ভিডিও বক্তৃতায় এই ঘোষণা দেন। গোয়াজা শহর দখল করে নেওয়ায় তার যোদ্ধাদের তিনি অভিনন্দনও জানান।

 

কিন্তু নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী তাদের দাবিকে ফাঁকা বুলি বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

 

উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রাম বোকো হারামের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু একদিনে আকাশ থেকে হঠাৎ করে এটি পড়েনি। একদিনেও দখল করে নেয়নি শহর ও গ্রামগুলো। মোট কথা দীর্ঘদিনের ফসল ঘরে তুলেছে মাত্র। নাইজেরিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম তাদের তৎপরতা শুরু করে ২০০৯ সালে।

 

উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর গোয়াজা। জনসংখ্যা ২ লাখ ৬৫ হাজার। বোকো হারামের সহিংস অভিযান শুরুর পর এখানে হাজার হাজার লোক মারা পড়েছে।

 

মূলত দুইশ’রও বেশি স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ করার পর মরিয়া হয়ে ওঠে বোকো হারাম। তারা হামলা চালাতে থাকে বিরতিহীনভাবে, একের পর এক।

 

এ ব্যাপারে সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই যে, এ বছরেই সবচেয়ে বেশি সহিংস ঘটনা ঘটে। বোকো হারামের হামলায় জানুয়ারি থেকে নিহত হয় কমপক্ষে ৩ হাজার ৩ শ’ লোক।

 

যেখানেই হামলা চালিয়েছে সেখানে তারা কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়েনি। আর পড়লেও তা অতি সামান্য। সেই সঙ্গে চলিয়েছে লুটপাট, বড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়াও বাদ দেয়নি।

 

তাদের হামলায় গ্রামের লোকজন হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। চিবক শহরের কাছে এক গ্রামের এক লোক ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের রক্ষা করতে না পারে, তাহলে আমাদের অস্ত্র দিক। আমরাই আমাদের রক্ষা করবো।’ এই চিবক থেকেই ছাত্রীদের অপহরণ করা হয়েছে।

 

শুধু হতাশা ও ক্ষোভের মধ্যে আটকে থাকেনি গ্রামবাসী। তারা ক্লান্তও হয়ে পড়েছেন চরমভাবে। গ্রামের এক লোক বলেন, ‘এক স্থান থেকে আরেক স্থানে রাত কাটাতে কাটাতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’

 

আঘাত করে দখল করাবোকো হারাম যোদ্ধাদের লুকানোর আস্তানা অনেক। কিন্তু যখন তারা কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পরিকল্পনা করে তখন সকলে একত্রিত হয়ে থাকে। ফলে সেনা সংখ্যার চেয়ে তাদের সংখ্যা হয় অনেক বেশি। তাই কুলিয়ে ওঠা সেনাবাহিনীর পক্ষে সম্ভব হয় না।

 

নাইজেরিয়ায় দূতাবাসে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে জেমস হল অনেকটা তাই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘বোকো হারাম তাদের ফায়ারপাওয়ার এক জায়গায় যখন পুঞ্জিভূত করে, তখন সেখানে সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যকে চোখেই পড়ে না। ফলে গ্রাম দখল করে নিতে বোকো হারামের কোনো অসুবিধাই হয় না। পড়তে হয় না বাধার মুখে।

 

তাই তিনি প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে, দেশের উত্তর-পূর্বঞ্চলে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বোকো হারামের যোদ্ধাদের দেখে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আগেভাগেই হার মেনে বসে থাকে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে গোয়াজা শহরের কথা উল্লেখ করা যায়। সেখানে জিহাদি যোদ্ধারা তাদের কালো-সাদা পতাকা তোলে রীতিমতো বিনা বাধায়। আর সেনা সদস্যরা ছিল দর্শকের কাতারে।

 

বোকো হারামের জঙ্গিরা ১ জুন আত্তাগারার একটি গীর্জায় হামলা চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা করে। কিন্তু গ্রামবাসী প্রতিশোধ নেয় বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে হত্যা করে। দুদিন পর জঙ্গিরা আবার ফিরে আসে প্রতিশোধ নিতে। সারা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। লোকজন আশ্রয় নেয় পাশেই পাহাড়ে। সেখান থেকে তারা কু-লি পাকিয়ে ধোঁয়া উঠতে দেখে।

 

হামলার এক সপ্তাহ পরও সেনাবাহিনীর টিকি নজরে পড়েনি বলে গ্রামের লোকজন জানান। তাদের মতে, সেনাবাহিনী বোকো হারামের প্রতি অত্যন্ত উদাসীন।

 

তারা বলছেন, বোকো হারামের লোকজন হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে না। বরং দখল করে নিচ্ছে। স্থায়ী ঘাঁটি গাড়ছে।

 

পুরুষ মানুষের জন্য ঘরবাড়িতে ফেরা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। তরুণীদেরও ভয় কম নয়, তাদের অপহরণ করা হতে পারে। তাই মৃতদের কবর দিতে পাঠানো হচ্ছে বৃদ্ধাদের। তারা মূলত অগভীর গর্ত খুড়ছে। এরপর কোনরকমে পুতে রাখছে লাশ।

 

সরকার ও সামরিক বাহিনী এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন ভূমিকা পালন করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাই দখলে নেওয়া অঞ্চলকে ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা করা বোকো হারামের পক্ষে সম্ভব হয়েছে।

   

তথ্যসূত্র: বিভিন্ন ওয়েবসাইট

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ আগস্ট ২০১৪/তৈয়বুর/শাহনেওয়াজ