ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন,, সরু গর্তে পড়ে শিশু সাজিদ যত নড়াচড়া করেছে, ততই নিচের দিকে নেমে গেছে। আবেগতাড়িতভাবে স্থানীয়রা উদ্ধারের চেষ্টা করলে তখনই মাটি ও খড় পড়ে শিশুটির জীবিত থাকার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, “আমরা সাজিদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করি। নিথর দেহটা হাতে পাওয়ার পর আমরা নিজেরাও কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। তবুও দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করেছি। পরে জানতে পারলাম, তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। এখন সবচেয়ে বেশি ভাবছি তার বাবা–মায়ের কথা। তাদের প্রতি আমরা গভীর সমব্যথী।”
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে সাজিদকে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর ঘটনাস্থলে তাকে উদ্ধারের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “গর্তে পড়ে যাওয়ার পর সাজিদ যত নড়াচড়া করেছে, ততই আরো নিচে নেমে গেছে—যা এমন দুর্ঘটনায় স্বাভাবিক একটি বিষয়। উপরে সামান্য চাপ পড়লেও ৩০, ৪০ বা ৫০ ফুট নিচে তা অনেক ভারী হয়ে যায়। এমনকি একটি ছোট ইটের টুকরাও সেখানে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। কারণ এত গভীরে অক্সিজেন খুব কম থাকে। সামান্য নড়াচড়াতেই শিশুটি আরো তলিয়ে গেছে—এটাই বাস্তবতা, এটাই তার কপালে ছিল।”
তিনি বলেন, “উদ্ধার অভিযানে একাধিক সীমাবদ্ধতা ছিল, তবুও সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করেছেন।” ইউএনওর সহযোগিতার কথা তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেন। এছাড়া ইউএস বাংলার সহযোগিতা স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান, শুরুতেই কিছু ভুল হয়ে যায়, যেটা পরে উদ্ধারকাজকে আরো কঠিন করে তোলে। তার ভাষায়, “আমরা আসার আগেই গর্তে মাটি ও খড়কুটো পড়ে যায়। সার্চ ভিশন ক্যামেরা নামালে শুধু মাটই দেখা যায়। আগেও এমন ছোট লুফোল রেখে যাওয়ার কারণে বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।”
এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে জরুরি ভিত্তিতে বিপজ্জনক গর্তগুলো ভরাট করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আটটি ইউনিট কাজে লাগিয়েছি। আমাদের ফায়ার ফাইটাররা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ফলাফল কী হবে, তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবুও প্রযুক্তি ও ম্যানুয়াল অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা পরিকল্পিতভাবে অভিযান পরিচালনা করেছি।”
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “জনগণকে সচেতন হতে হবে। যে সব স্থানে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা রয়েছে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো তা দেখবে। তবে কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।”
গত, বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজশাহীর তানোরের পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়ায় সাজিদ গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত গর্তে পড়ে নিখোঁজ হয়। প্রায় ৩২ ঘণ্টার অভিযান শেষে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ৫০ ফুট মাটি খনন করে শিশুটিকে উদ্ধার করে। মারা যাওয়া সাজিদ কোয়েলহাট পূর্বপাড়ার রাকিবুল ইসলামের ছেলে।