চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে তফসিলি ব্যাংকগুলো মোট ১১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। বছরের ব্যবধানে কৃষি ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণের হালনাগাদ এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাতভিত্তিক হিসাবে দেখা গেছে শস্য উৎপাদন, প্রোলট্রি তথা প্রাণিসম্পদ খাতে ঋণ বিতরণের হার বেড়েছে। শস্য খাতে মোট কৃষি ঋণের প্রায় ৪৭ শতাংশ বিতরণ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি। বিপরীত দিকে মৎস্য ও অন্যান্য খাতে ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমেছে।
চলতি ২০২৫- ২৬ অর্থবছরের অক্টোবরে গ্রামীণ ব্যাংক ও বড় ১০টি এনজিও সম্মিলিতভাবে ১৮ হাজার ৫০ কোটি ১০ লাখ টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। যা আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ১২ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ১৬ হাজার ৩৮৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ আদায় করেছে। যা ২০২৪ সালের অক্টোবরের তুলনায় ২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।
এদিকে, বিতরণ করা কৃষি ঋণ অক্টোবরে আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। যা আগের মাসের তুলনায় ২২ শতাংশ কম। সেপ্টেম্বর মাসে কৃষি ঋণ আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের অক্টোবর শেষে সব তফসিলি ব্যাংকের কৃষি ঋণের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৪৩৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের অক্টোবরে খেলাপি ছিল ১১ হাজার ৯৩১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে খেলাপি হার ৮৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি অর্থবছরের নীতিমালায় নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে - প্রাণিসম্পদ খাতে বরাদ্দ ২০ শতাংশ করা, সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে ২ শতাংশ বরাদ্দ, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের সিআইবি সার্ভিস চার্জ মওকুফ, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতা বৃদ্ধি, খিরা, কচুর লতি, বিটরুট, কালোজিরা, আদা, রসুন, হলুদ, খেজুর গুড় ইত্যাদি নতুন ফসল ঋণ নীতিতে অন্তর্ভুক্ত এবং অঞ্চলভিত্তিক উৎপাদন সম্ভাবনা অনুযায়ী ঋণ বিতরণেরও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ১৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের জন্য ২৫ হাজার ১২০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছর কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ ছিল। কৃষি খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ খাতে পর্যাপ্ত ঋণ প্রবাহের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে এবার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে।