সারা বাংলা

ক্যান্সার আক্রান্ত বীরঙ্গনা যোগমায়া পেলেন ‘বীর নিবাস’

ক্যান্সার আক্রান্ত শরীয়তপুরের বীরঙ্গনা যোগমায়া মালোকে বীর নিবাসের ঘর দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিজয় দিবসের একদিন আগে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) তার পরিবারের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম। ঘরটি পেয়ে খুশি পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, শয্যাশায়ী যোগমায়া মালোকে যেন সরকারিভাবে চিকিৎসা করানো হয়। 

যোগমায়া মালোর পরিবার জানায়, ১৯৭১ সালের ২২ মে শরীয়তপুর সদরের মনোহর বাজারের দক্ষিণ মধ্যপাড়ার হিন্দু এলাকায় তাণ্ডব চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। প্রতিটি ঘর থেকে তুলে আনা হয় নারী-পুরুষদের। সেদিন অন্যদের সঙ্গে তুলে নেওয়া হয় নেপাল চন্দ্র মালোর স্ত্রী যোগমায়া মালোকে। তখন ১৫ বছরের কিশোরী গৃহবধূ ছিলেন তিনি।

কয়েকজনকে মধ্যপাড়া এলাকায় গুলি করে হত্যা করার পর, অন্তত ১০০ জন নারী-পুরুষকে লঞ্চে তুলে মাদারীপুরের এআর হাওলাদার জুট মিলে নিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। সেখানে পুরুষদের অনেককেই গুলি করে হত্যা করা হয়। নারীদের ৩ দিন ৩ রাত আটকে রেখে চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে যোগমায়া মালো ফিরে আসেন স্বামীর কাছে।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ২০১৮ সালে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলে তার। তবে, মনের ক্ষত বয়ে বেড়ানো এই বীরাঙ্গনা নারীর ছিল না থাকার কোনো ঘর। বিষয়টি নিয়ে গতবছর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এবার বিজয় দিবসের একদিন আগে সোমবার তাকে সরকারিভাবে বীর নিবাসের ঘর দিল জেলা প্রশাসন। 

জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগে খুশি এলাকাবাসী। শেষ বয়সে মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও বর্তমানে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে শয্যাশয়ী বীরাঙ্গনা যোগমায়া মালো। সরকারিভাবে তাকে চিকিৎসা করানোর দাবি পরিবার ও স্বজনদের।

স্থানীয় বাসিন্দা হাজী মোতালেব মাদবর বলেন, “যোগমায়া মালোর সুযোগ সুবিধা আরো আগেই পাওয়া উচিত ছিল। এই শেষ বয়সে তিনি একটি ঘর পেলেন, এটাই তার জীবনের সার্থকতা। তিনি এখন অনেক অসুস্থ। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আমরা এলাকাবাসীর দাবি, সরকার যেন তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।” 

যোগমায়া মালোর ছেলে অশোক মালো বলেন, “আমার মা বীরাঙ্গনা। আমরা অনেক কষ্টে দিন পার করেছি। ঘর না থাকায় অন্যের আশ্রয়ে দিন কেটেছে। দীর্ঘদিন ধরে একটি ঘরের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। সংবাদ প্রচারের পর আজ সরকারিভাবে একটি থাকার ঘর পেয়েছি। আমরা অনেক খুশি।” 

তিনি বলেন, “আমার মা এখন ক্যান্সার আক্রান্ত। তার চিকিৎসা করানোর মতো টাকা আমাদের নেই। সরকার যদি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করত তাহলে তিনি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারতেন।” 

পুত্রবধূ ডলি মালো বলেন, “আমরা ঘর পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি। আমার শাশুড়ি অনেক অসুস্থ। সরকার যদি আর্থিক সহযোগিতা করে তাহলে আমরা তাকে চিকিৎসা করাতে পারতাম।” 

যোগমায়া মালোর জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে পেরে খুশি জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম। এই বীরঙ্গনার চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তাহসিনা বেগম বলেন, “গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারের পর আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছিলাম। অবশেষে তার জন্য একটি নতুন ঘর করে দিতে পেরেছি, এজন্য আমরা খুশি। আমরা সব সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের পাশে আছি।” 

তিনি বলেন, “বর্তমানে বীরাঙ্গনা যোগমায়া মালো ক্যান্সার আক্রান্ত বলে এখানে এসে জানতে পেরেছি। আমরা তার জন্য সরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেব।”