ক্যাম্পাস

চবিতে সাম্প্রতিক অস্থিরতা ও জাতীয় ঐক্যে সাদা দলের বিবৃতি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিরসন ও জাতীয় ঐক্য, একাডেমিক স্বাধীনতা এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনা সমুন্নত রাখতে বিবৃতি দিয়েছে চবি শিক্ষক সমাজ সাদা দল।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে সাদা দলের আহ্বায়ক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোছাইন ও যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, চব্বিশের জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বৈরাচার ও একপক্ষীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে এক অবিস্মরণীয় গণবিজয়। এই আন্দোলনে অগণিত শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি, তার মূলে রয়েছে একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ। দীর্ঘ কয়েক দশকের রাজনৈতিক মেরুকরণ ও বিভাজনের সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় ঐক্যকে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বর্তমান এই পুনর্গঠন সময়ে এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে জুলাই বিপ্লবের পক্ষের সকল শক্তির মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সংহতি বজায় রাখা অপরিহার্য। সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করাই এখন আমাদের সময়ের দাবি।

বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা এবং সুস্থ বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কের কেন্দ্রস্থল। দীর্ঘ সময় ধরে যে একপক্ষীয় ও চাপিয়ে দেওয়া মতাদর্শের চটা চলে আসছিল, তা একাডেমিক পরিবেশের জন্য শুভ নয়। আমরা বিশ্বাস করি, বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের মূল ভিত্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় প্রতিটি যৌক্তিক মতামতকে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করা এবং প্রমাণভিত্তিক আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করা উচিত, এমন বক্তব্যও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

সাদা দল জানায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক)-এর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে তার অবস্থান ও ব্যাখ্যা স্পষ্ট করেছেন। তা সত্ত্বেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আরেক পক্ষ এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মহান বিজয় দিবসের মতো একটি জাতীয় অনুষ্ঠানে যে ধরনের বিশৃঙ্খলা ও বিভাজন দেখা গেছে, তা জাতীয় ঐক্যের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। আমরা মনে করি, কাউকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার জন্য 'ট্যাগিং বা তকমা ব্যবহারের সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা জরুরি। সহিংসতা বা হুমকির পরিবর্তে সংলাপই হোক সকল মতপার্থক্যের সমাধান।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আমাদের জাতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্লেষক ও আলোচকদের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন মতামত প্রকাশ করতে দেখা যায়। এ মতামত প্রকাশের ভিন্নতার ওপর অনৈক্য সৃষ্টি না করে বরং যৌক্তিক বিষয়গুলো খুঁজে দেখা দরকার এবং জাতিকে এগিয়ে নেয়ার নিমিত্তে সবার ঐক্যবদ্ধ পথচলা জরুরি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীগণের প্রতি আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের জাতির গর্ব।

আমরা সকল পক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ ও একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখতে সহযোগিতার আহ্বান আনাই। জাতীয় দিবসগুলোকে রাজনৈতিক সংঘাতের ক্ষেত্র না বানিয়ে জাতীয় সংহতির প্রতীক হিসেবে পালন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা জুলাই আন্দোলনের সেই চেতনায় অবিচল যেখানে ঐক্য, সত্যনিষ্ঠা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধই হবে সুন্দর আগামীর পথপ্রদর্শক। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুলাইয়ের শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করার সর্বোত্তম উপায় হলো একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা।