কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক মহাকাব্যিক সিনেমা ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘অ্যাভাটার’। এটি নির্মাণ করেছেন ‘টাইটানিক’খ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরন। ২০০৯ সালে এ ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম কিস্তি মুক্তির পর বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমায় পরিণত হয়। ১৩ বছরের বিরতি নিয়ে নির্মিত হয় দ্বিতীয় কিস্তি; নাম রাখা হয়—‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’। তারপর তিন বছরের প্রতীক্ষা। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) মুক্তি পেয়েছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’।
প্রথম দুই কিস্তি মিলিয়ে বক্স অফিসে আয় করেছে ৫.২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ফলে বিশ্বের বিশাল অংশের দর্শক এই সিনেম্যাটিক অভিজ্ঞতার অংশ হয়েছেন। কিন্তু দুই কিস্তির গল্প, চরিত্র, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সিনেমাপ্রেমীদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ দেখার আগে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির ৮টি বিষয় জেনে নিন—
অ্যাভাটার ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান চরিত্রসমূহ অ্যাভাটার ফ্র্যাঞ্চাইজির কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো—জেক সালি (স্যাম ওয়ার্থিংটন)। পক্ষাঘাতগ্রস্ত প্রাক্তন এই মেরিন এখন প্যান্ডোরায় বসবাস করেন; যা না’ভি ও অসংখ্য প্রাণীর আবাসভূমি। মানুষের তৈরি না’ভি অ্যাভাটার দেহের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে নিজের চেতনা যুক্ত করেছেন। জেকের পরিবারও সিরিজে বড় ভূমিকা রাখে। তার স্ত্রী নেতিরি (ফোয়ে সালভানিয়া)। তাদের বায়োলজিক্যাল তিনটি সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে নেতেয়াম মারা গেছে। দ্বিতীয় ছেলে লো’আক এবং ছোট মেয়ে চিকশিরি। তাছাড়া জেক-নেতিরি দম্পতি কিরিকে দত্তক নিয়েছে। মাইলস কোয়ারিচ (স্টিফেন ল্যাং) এই ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান খলনায়ক। প্রাক্তন আরডিএ কমান্ডার কোয়ারিচ ‘দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’-এ মানুষের স্মৃতি নিয়ে না’ভির দেহে পুনরায় জন্ম নেয়। ফলে জেকের বিরুদ্ধে তার প্রতিশোধের আগুন আবারো জ্বলে ওঠে।
অ্যাভাটারের বিভিন্ন গোত্র প্যান্ডোরার আদিবাসী না’ভিরা। বিশাল এই গ্রহে সময়ের সঙ্গে বহু গোত্র গড়ে উঠেছে। সিনেমাটির প্রথম পার্টে শুধু ওমাতিকায়া গোত্রকে দেখা যায়, যারা জঙ্গলে বাস করে। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অ্যাভাটার’ সিনেমার শেষে জেক সালি গোত্রপ্রধান হন। আর নেতিরি হন সাহিক (আধ্যাত্মিক নেত্রী)। তাদের উড়ন্ত জন্তু হলো—তোরুক। না’ভির ‘দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’-এ নব্য জলভিত্তিক একটি গোত্র পরিচিতি পায় ‘মেটকাইনা’ নামে। এ গোত্রের নেতা ‘রোনা’ ও ‘টোনোওয়ারি’। প্যান্ডোরায় অনেক রিফ গোত্র থাকলেও মেটকাইনারা সবচেয়ে বড় এবং তারাই সালি পরিবারকে আশ্রয় দেয়। তাদের প্রতীকী প্রাণীর নাম ‘তুলকুন’; যা বিশাল আকৃতির তিমির মতো। ‘ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ সিনেমায় আরো একটি নতুন গোত্র আসছে; যা ‘অ্যাশ পিপল’ বা ‘মাংকওয়ান’ গোত্র নামে পরিচিত। তাদের নেতা ‘ফারাং’। এই গোত্রটি তুলনামূলকভাবে বেশি আগ্রাসী। তারা আইওয়াতে বিশ্বাস করে না। কারণ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে তাদের ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।
আইওয়া কী? প্যান্ডোরার সমস্ত জীবন শক্তিশালী একটি সত্তার সঙ্গে যুক্ত; যার নাম ‘আইওয়া’। এটিকে কখনো ‘অল-মাদার’ বা ‘গ্রেট মাদার’ বলা হয়। ‘আইওয়া’ প্যান্ডোরার সব জীবকে বিশাল নিউরাল সংযোগের মাধ্যমে যুক্ত করে। এর ফলে জীবিতদের মধ্যে স্মৃতি আদান–প্রদান করা সম্ভব হয় এবং মৃতদের স্মৃতিও বেঁচে থাকে। না’ভিরা আইওয়াকে পূজা করে। ‘ট্রি অব সোলস’ বা ‘স্পিরিট ট্রি’-এর মতো পবিত্র স্থানগুলো এর সঙ্গে যুক্ত। না’ভিরা আইওয়াকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। যদিও সবসময় প্রার্থনার ফল পাওয়া যায় না, তারপরও দেবতা প্যান্ডোরায় সমস্ত জীবনকে একত্রিত করার, চেতনা স্থানান্তর; যা কিছু ঘটছে তা জানার ক্ষমতা দেখিয়েছে।
‘অ্যাভাটার’ সিনেমায় কী ঘটেছিল? ‘অ্যাভাটার’ সিনেমায় দেখা যায়, জেক সালি প্যান্ডোরায় আগমন, অ্যাভাটার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং ওমাতিকায়া গোত্রের সঙ্গে তার বন্ধন। সে না’ভিদের জীবনধারা শেখে, মানুষের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে এবং আরডিএ–এর বিরুদ্ধে লড়াই করে; যারা প্যান্ডোরার দুর্লভ সম্পদ আনঅবটেনিয়াম খনন করতে চায়। আরডিএ ওমাতিকায়া গোত্রের বিশাল হোমট্রি ধ্বংস করে; যার নিচে বিপুল পরিমাণ আনঅবটেনিয়াম ছিল। জেক ও গোত্রটি ‘ট্রি অব সোলস’ ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে। শেষে নেতিরি কোয়ারিচকে হত্যা করে। গ্রেস’স (সিগর্নি ওয়েভা) মারা যাওয়ার আগেই তার চেতনা আইওয়ার অংশ হয়ে যায়। যদিও তার অ্যাভাটার দেহে সম্পূর্ণ স্থানান্তর সম্ভব হয়নি। শেষে জেকের চেতনা সফলভাবে না’ভি দেহে স্থানান্তরিত করা হয়; অধিকাংশ মানুষ প্যান্ডোরা ছাড়তে বাধ্য হয়।
‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ সিনেমায় কী ঘটেছিল? প্রথম পার্ট মুক্তির অনেক বছর পরের কাহিনি নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ সিনেমার গল্প। জেক, নেতিরি ও তাদের সন্তানেরা আরডিএ–এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে; যারা আরো শক্তি ও ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা নিয়ে প্যান্ডোরায় ফিরে আসে। কোয়ারিচ আবার ফিরে আসে; তার মনের একটি ‘কপি’ না’ভির একটি হাইব্রিড মানব দেহে স্থানান্তর করা হয়। সে স্পাইডার নামে একটি মানব কিশোরকে অপহরণ করে, যে আসলে কোয়ারিচের বায়োলজিক্যাল সন্তান।
সালি পরিবার পালিয়ে গিয়ে মেটকাইনা গোত্রে আশ্রয় নেয়। গোত্রের নেতার কন্যা সাইরেয়া, নির্বাসিত তুলকুন ও পায়কানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেন লো’আক। শেষ পর্যন্ত কোয়ারিচ টুলকুন শিকার করতে গিয়ে তাদের খুঁজে পায়, যার ফলে আরডিএ আর্মির সঙ্গে মেটকাইনা গোত্র, সালি পরিবারের ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় পায়াকান থেকে অতিরিক্ত সাহায্য পায় তারা। ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ সিনেমার শেষে নেতিরি মারা যায়। কোয়ারিচ পালিয়ে যায়; এরপর সালি পরিবার আবারো একত্রিত হয়।
কিরির রহস্যময় জন্ম ‘দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ সিনেমার অন্যতম বড় রহস্য কিরি। যে গ্রেসে’স অ্যাভাটারের বায়োলজিক্যাল কন্যা। কীভাবে তার জন্ম হলো, তা সিনেমাটিতে স্পষ্ট করা হয়নি। কারণ প্রথম পার্টে গ্রেসে’সর সঙ্গে কারো কোনো রোমান্টিক বা যৌন সম্পর্ক ছিল না। ফলে কিরির জন্ম সম্পর্কে কেউ জানে না। যা জানা যায়, তা হলো—কিরির সঙ্গে আইওয়ার বিশেষ একটি বন্ধন সবসময়ই ছিল। সে অন্যান্য প্রাণীদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেখিয়েছে; যা প্রায় আইওয়ার মতোই। কিন্তু যখন সে আত্মিক জগতে গিয়ে তার বাবার পরিচয় মায়ের কাছে জানতে চায়, তখন তার মারাত্মক খিঁচুনি হয়। কিরির বাবা কে? এ প্রশ্নের উত্তর ‘ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এ আসুক বা না আসুক, সিনেমাটি অবশ্যই এই গল্পের উপর ভিত্তি করেই তৈরি এবং গ্রেসে’সর মেয়েকে বিশেষ করে তোলার কিছু দিক তুলে ধরবেন নির্মাতা।
কোয়ারিচই স্পাইডারের বাবা কিরির মতো প্রায় একইরকম অধ্যায় স্পাইডারের বাবার প্রসঙ্গ। ‘ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এ কোয়ারিচ-স্পাইডারের সম্পর্কের বিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ‘দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ পার্টে পরিষ্কার হয়েছে যে, কিশোর ছেলেটি কোয়ারিচের বায়োলজিক্যাল পুত্র, স্পাইডারের মায়ের পরিচয় একটি টাই-ইন কমিকে প্রকাশিত হয়েছে। শুরুতে তারা একে অপরকে অস্বীকার করলেও ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে বন্ধন তৈরি হয়। কোয়ারিচ স্পাইডারকে বাঁচাতে কিরিকে ছেড়ে দেয়, আর স্পাইডার পরে কোয়ারিচকে ডুবে মরার হাত থেকে বাঁচায়। বাবা–ছেলের এই সম্পর্ক ‘ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এ বড় ভূমিকা রাখবে।
মানুষ কেন প্যান্ডোরায়? ‘অ্যাভাটার’ সিনেমায় প্যান্ডোরায় মানুষের উপস্থিতির কারণ সময়ের সঙ্গে বদলেছে। প্রথমে আরডিএ আসে পৃথিবী বাঁচানোর জন্য আর সম্পদ সংগ্রহ করতে। বিশেষ করে আনঅবটেনিয়ামের জন্য। কিন্তু প্রথম পার্টের শেষে সেই মিশন বন্ধ হয়ে যায়। পরে মানুষ ফিরে এসে প্রধানত দুটি লক্ষ্য স্থির করে। এক. প্যান্ডোরায় স্থায়ী মানব উপনিবেশ গড়ে তোলা; যাতে তারা বিশ্বকে এমন একটি স্থানে রূপান্তরিত করতে পারে, যেখানে মানবজাতি স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। দুই. অমৃত সংগ্রহ করা। এটি হলুদ রঙের তরল, যা তুলকুনের ভিতরে পাওয়া যায়। যা মানুষের বার্ধক্য সম্পূর্ণরূপে দূর করার ক্ষমতা রাখে। এই দুটি লক্ষ্যই না’ভিদের প্রতিরোধ আন্দোলনের মূল কারণ। ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ সিনেমায় এই দ্বন্দ্ব আরো তীব্র হবে, যেখানে আরডিএ–এর পাশে থাকবে কোয়ারিচ এবং তার নতুন মিত্ররা। এ তালিকায় রয়েছে—মাংকওয়ান গোত্র।