ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের গৃহকর্মী সোনালি খাতুনকে তার স্বামী দানিশ শেখ এবং তাদের আট বছরের ছেলের সাথে দিল্লিতে আটক করা হয়। অবৈধ অভিবাসী সন্দেহে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। পরে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে দেশে প্রবেশের অভিযোগে পরিবারটিকে জেলে পাঠায়।
সোনালি খাতুনের এই খবর জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার তীব্র সমালোচনা করে। তারা ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে কারণ ছাড়াই সোনালি ও তার পরিবারকে নির্বাসিত করার অভিযোগ করে। গত কয়েক মাসে অবৈধ অভিবাসী সন্দেহে আটক করে বাংলাদেশে নির্বাসিত করা শত শত লোকের মধ্যে সোনালিও একজন।
দিল্লি এই পুশইন সম্পর্কে কোনো সরকারি তথ্য প্রদান করেনি। তবে বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষস্থানীয় সূত্রগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে, শুধুমাত্র মে মাসেই ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি লোককে ‘অবৈধভাবে ঠেলে’ দেওয়া হয়েছে। একই মাসে, সরকার পরিচালিত অল ইন্ডিয়া রেডিও জানিয়েছে, দিল্লি থেকে প্রায় ৭০০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ভারতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান নতুন নয়। দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং পাঁচটি রাজ্যজুড়ে ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তবর্তী অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসনের ঢেউ দেখা গেছে, কারণ মানুষ কাজ খুঁজতে বা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতের এই রাজ্যে পালিয়ে এসেছে।
কিন্তু অধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বহিষ্কারের টার্গেট হচ্ছে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠী। এই অভিযান যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে।
দিল্লির ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস জানিয়েছে, ভারতে বৈধ প্রবেশ বা থাকার প্রমাণের জন্য কোনো কাগজপত্র না থাকায় সোনালি ও তার পরিবার এবং তার তিন প্রতিবেশীকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তার সাত বছর বয়সী মেয়েকে রেখে যাওয়া হয়েছিল। কারণ পরিবারকে আটক করার সময় সে আত্মীয়দের সাথে ছিল।
প্রোটোকল অনুসারে, কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই একজন সন্দেহভাজন অবৈধ অভিবাসীর স্বরাষ্ট্র রাজ্যের দাবি যাচাই করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ অভিবাসী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বিবিসিকে জানিয়েছেন, সোনালির বেলায় এই কাজটি করা হয়নি।
বিবিসি দিল্লির স্বরাষ্ট্র বিভাগকে চিঠি লিখেছে যারা নির্বাসন পর্যবেক্ষণ করে।
ডিসেম্বরে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ফেডারেল সরকারকে অনুরোধ করে যে, সোনালি ও তার ছেলেকে ‘মানবিক কারণে’ নাগরিকত্ব তদন্তের সময় দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। তখন থেকে তিনি পশ্চিমবঙ্গে তার বাবা-মায়ের সাথে বসবাস করছেন। জামিনে মুক্তি পাওয়া তার স্বামী বাংলাদেশে একজন আত্মীয়ের সাথে রয়েছেন।
ভারতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে সোনালির মিশ্র অনুভূতি রয়েছে। জানুয়ারিতে জন্ম নিতে যাওয়া তার সন্তান জন্মগতভাবে একজন ভারতীয় নাগরিক হবে জেনে তিনি স্বস্তি বোধ করছেন। কিন্তু তার স্বামীকে নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন, যাকে তিনি বাংলাদেশে পৃথক কারাগারে বন্দি থাকার পর থেকে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে দেখেননি।
ভিডিও কলে তিনি বলেন, তার স্বামী প্রায়ই ভেঙে পড়েন এবং বলেন যে তিনি দেশে ফিরতে চান।
সোনালির প্রশ্ন- “আমরা বাংলাদেশি নই, আমরা ভারতীয়। তারা আমাদের সাথে কেন এমন করল?”