বিনোদন

আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে ক্ষতি পূরণ করবে ছায়ানট: বিবৃতি

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এক বিবৃতিতে তারা বলেছে,আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এই ক্ষতি পূরণ করবে ছায়ানট। 

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সংগঠনটির সভাপতি সারওয়ার আলী ও সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসার সই করা একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

এতে বলা হয়েছে, “গতকাল রাতে ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একজোট লোক ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। তারা ছয়তলা ভবনের সকল সিসি ক্যামেরাসহ অধিকাংশ কক্ষ, প্রক্ষালণ কক্ষ, বহু বাদ্যযন্ত্র, মিলনায়তন, কম্পিউটার ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে।”

“অন্তত ৭টি ল্যাপটপসহ কয়েকটি ফোন ও হার্ড ডিস্ক লুট করেছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ছায়ানট একটি স্বেচ্ছাসেবী ও স্বনির্ভর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। ছায়ানট কোনো সরকার, বিদেশি সংস্থা বা করপোরেট অনুদান গ্রহণ করে না। সুতরাং, ছায়ানট আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এই ক্ষতি পূরণ করবে। সংগীত এবং শিশুদের সাধারণ শিক্ষায় এই সাময়িক বিঘ্নের দ্রুত প্রতিকার করতে বদ্ধপরিকর।”

ছায়ানটের কাজের ক্ষেত্র রাজনীতি নয়, সংগীত সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ছায়ানট সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সমাজ গড়তে প্রয়াসী।

ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে কেন হামলা সংঘটিত হলো, তা মোটেও বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেছে ছায়ানট। তাদের ভাষ্য, “আমরা ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। কিন্তু ওই সূত্র ধরে ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে কেন হামলা সংঘটিত হলো তা মোটেই বোধগম্য নয়। হয়তো, পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করেছে সংস্কৃতি চর্চার বিরোধী গোষ্ঠী।” 

ছায়ানট এই উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ অনানুষ্ঠানিক সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা দেশে ও বিদেশে সমাদৃত। বাংলা গানের চর্চা বিস্তৃতির পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামে ছায়ানটের ভূমিকাও সারা বিশ্বে স্বীকৃত। তাই ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে এই নিন্দনীয় হামলা মাতৃভূমি সম্পর্কে বিশ্বে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে পারে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে। 

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে একটি দল কারওয়ানবাজারে দৈনিক প্রথম আলো কার্যালয়, পরে দৈনিক ডেইলি স্টার ভবনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। রাত দেড়টা থেকে আড়াইটার দিকে একদল বিক্ষোভকারী ধানমন্ডিতে ছায়ানটে হামলা চালায়।  

ছায়ানট ঘুরে দেখা যায়, হামলাকারীরা ছায়ানটে যা পেয়েছে, তাই ভাঙচুর করেছে। তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনতলার একটি ভবনে পুড়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে স্তূপাকারে পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া বই। পুরো মনিটরিং সিস্টেম, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, স্পিকার, লাইট ও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে থাকা মাটির তৈরি চারুকর্ম ও শিল্প কর্ম ভেঙে ফেলা হয়েছে। 

ন্যক্কারজনক এই ঘটনাকে ‘ফৌজদারি অপরাধ’ এবং ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি’ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছায়ানটের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার কাজ করছে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

ছায়ানটের জন্মকথায় বলা হয়েছে, সংগঠনটির ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, বাংলা ১৩৬৮, ইংরেজি ১৯৬১ সালে সারাবিশ্বে রবীন্দ্রশতবার্ষিকীর আয়োজন বাংলার এই প্রান্তের সংস্কৃতিসচেতন মানুষের মনেও চাঞ্চল্য জাগায়। উদ্‌যাপনের ঐকান্তিক ইচ্ছায় পাকিস্তানি শাসনের থমথমে পরিবেশেও কিছু বাঙালি একত্র হন আপন সংস্কৃতির মধ্যমণি রবীন্দ্রনাথের জন্ম শতবর্ষপূর্তির উৎসব করবার জন্যে। উদ্যোগী হলেন বিচারপতি মাহবুব মুর্শেদ, ডক্টর গোবিন্দচন্দ্র দেব, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ বুদ্ধিজীবী, তেমনি ঢাকার কিছু সংস্কৃতিকর্মীও আগুয়ান হলো শতবর্ষ উদযাপনের উদ্দেশ্যে। অগ্রাহ্য হলো অনতিউচ্চারিত নিষেধ। 

আরো লেখা হয়েছে, সংস্কৃতি-প্রাণ মানুষের মনে আত্মবিশ্বাস এনে দেয় রবীন্দ্রশতবার্ষিকীর সফল উদ্যোগ। শতবার্ষিকী উদ্‌যাপন করবার পর এক বনভোজনে গিয়ে সুফিয়া কামাল, মোখলেসুর রহমান (সিধু ভাই), সায়েরা আহমদ, শামসুন্নাহার রহমান (রোজ বু), আহমেদুর রহমান (ইত্তেফাকের ‘ভীমরুল’), ওয়াহিদুল হক, সাইদুল হাসান, ফরিদা হাসান, সন্‌জীদা খাতুন, মীজানুর রহমান (ছানা), সাইফউদ্দীন আহমেদ মানিকসহ বহু অনুপ্রাণিত কর্মী সাংস্কৃতিক আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্যে সমিতি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন। জন্ম হয় ছায়ানটের। তমসাচ্ছন্ন পাকিস্তানি যুগে কঠোর সামরিক শাসনে পদানত স্বদেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্রভাবনা অবলম্বন করে ছায়ানট যাত্রা শুরু করে।