ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি কোম্পানি হতাশ ফিলিস্তিনিদের শোষণ করছে এবং গাজা থেকে জোরপূর্বক তাদের উচ্ছেদের সুযোগ করে দিচ্ছে। এই কোম্পানিটি ফিলিস্তিনিদের গোপনে দেশ ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে। এসব কর্মকাণ্ড সম্ভবত এই অঞ্চলটিকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার একটি আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা। শনিবার আল-জাজিরা অনলাইন এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
একটি এক্সক্লুসিভ ডিজিটাল তদন্তে দেখা গেছে, গত মাসে একটি রহস্যময় বিমানে করে গাজা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫৩ জন যাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়। এই পুরো কাজের পেছনে ছিল আল-মাজদ ইউরোপ নামের একটি অনিবন্ধিত সংগঠন যারা মানবিক উদ্দেশ্যে কাজ করার মিথ্যা দাবি করেছিল।
ফিলিস্তিনিরা ১৩ নভেম্বর ওআর টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের প্রবেশে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের পাসপোর্টে ইসরায়েল থেকে প্রস্থান স্ট্যাম্প না থাকায়, তারা ১২ ঘন্টা বিমানে আটকে থাকে এবং তারপর নামার অনুমতি পায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ওই সময়ে জানিয়েছিলেন, তার সরকার এই ঘটনার তদন্ত করবে। কারণ মনে হচ্ছে তাদের গাজা উপত্যকা থেকে ‘বিতাড়িত’করা হয়েছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা পূর্বে প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, তারা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছায় অভিবাসন’কে সমর্থন করে, যা কার্যকরভাবে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছে।
২০২৫ সালের মার্চে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছায় গাজা ছেড়ে যাওয়ার জন্য একটি বিতর্কিত ব্যুরো গঠন করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-পরিচালক ইয়াকভ ব্লিটস্টাইন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সেই সময়ে বলেছিলেন যে গাজার ৪০ শতাংশ বাসিন্দা ‘অভিবাসনে আগ্রহী।’
এর আগের মাসেই আল-মাজদ ইউরোপ একটি নতুন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের অনলাইন উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করে। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছিল যে তারা মুসলিম দেশগুলোতে ত্রাণ তৎপরতার উপর মনোযোগ দেয়, বিশেষ করে ‘গাজা ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক বাসিন্দাদের জন্য’। এছাড়া তারা ছিটমহলে মোবাইল স্বাস্থ্য ক্লিনিক এবং ফিলিস্তিনি ডাক্তারদের বিদেশে ভ্রমণের আয়োজন করেছে। আল জাজিরার তদন্তে দেখা যায়, তাদের ত্রাণ তৎপরতার বিষয়টি ভুয়া।
আল-মাজদ ইউরোপ দাবি করেছিল, তারা ২০১০ সালে জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত একটি মানবিক ফাউন্ডেশন, যার প্রধান কার্যালয় অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জাররাতে অবস্থিত। আল জাজিরা কোনো জার্মান বা ইউরোপীয় ডাটাবেসে এই নামে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানি খুঁজে পায়নি। অনুমিত ঠিকানাটি জেরুজালেমের সরকারী রেকর্ডেও দেখা যায় না, গুগল ম্যাপে অবস্থানটি একটি হাসপাতাল এবং একটি ক্যাফের সাথে সম্পর্কিত।
বিস্তৃত তদন্তে দেখা গেছে, আল-মাজদ নিজেই একটি ভুয়া মানবিক গোষ্ঠী।