ভ্রমণ

মহেশখালীর দর্শনীয় স্থাপনা: বড় রাখাইন পাড়া বৌদ্ধ মন্দির

কক্সবাজার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরত্বে মহেশখালী  উপজেলা মিষ্টিপানের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশ ছাড়াও এ পানের কদর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। ১৯৮২ সালে উপজেলায় উন্নীত হওয়া মহেশখালীতে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অনেক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। আদিনাথ মন্দির, বড় রাখাইন পাড়া ও বৌদ্ধ মন্দির এর মধ্যে অন্যতম। 

‘প্যারাবন’ নামে পরিচিত মহেশখালীকে সমৃদ্ধ করেছে বিচিত্র প্রজাতির জলচর প্রাণী, শুটকি, উপকূলীয় বনভূমি, কেয়া বন, লাল কাঁকড়া ও সাগরের গাঢ় নীল পানি। নৌ-পথে পুরনো মহেশখালী জেটি কিংবা নতুন জেটি বলে খ্যাত আদিনাথ জেটি হয়ে মহেশখালী চ্যানেল ধরে যাতায়াত করেন এ এলাকায় আগতরা। সেই জেটির কাছাকাছি নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম তীর এলাকায় গড়ে উঠেছে কেয়া-নিশিন্দার ঘন ঝোপ। 

হাল সময়ে কিছু গোলপাতার গাছও এখানে লাগানো হয়েছে। নদীর পাড় বাঁচানো সবুজে ঘেরা এসব গাছ-গাছালির ফাঁকে একটি সাদা মিনার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যা এ এলাকায় আগত যে কোনো পযর্টকের নজর কাড়ে। আমি আর আমার ভ্রমণসঙ্গী সানন্দা আজ আছি মহেশখালীর শতাব্দীর পুরোনো ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দিরে। 

সকাল দশটায় কক্সবাজার থেকে যাত্রা শুরু করি আমরা। সুনীল সাগর পেরিয়ে আমরা মহেশখালী পৌঁছে যাই খুব কম সময়েই। এরপর থেকে ইঞ্জিনচালিত ত্রিচক্রযানে ঘুরে বেরাচ্ছি। টিকিট কেটে মন্দিরে প্রবেশ করেই হাতের ডানদিকে আমরা অগ্রসর হলাম। মন্দিরের অসাধারণ সুন্দর স্থাপত্যশৈলী যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। পদব্রজে আমরা এগিয়ে গেলাম। মূল মন্দির আনুমানিক প্রায় ২৮৪ বছর পূর্বে নির্মিত।  পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুসারে মন্দিরের সংস্কার এবং মেরামত হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখে বর্তমান মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করা হয়। বড় পিতলের মূর্তিটি ১০১ বছর পূর্বের; এটি বাংলাদেশের মধ্যে ২য় বৃহত্তম বৌদ্ধমূর্তি। মূর্তিটি সম্পূর্ণ একটি গাছ খোদাই করে বানানো। গাছে খোদাই করা আর কোনো বৌদ্ধমূর্তি বাংলাদেশে নেই। 

প্রচলিত আছে, এই মন্দিরে অবস্থিত মুং জা লিংদা পুকুরে গৌতম বুদ্ধ ধ্যান করেছেন। তিনি বোধী লাভের পর ৭টি পুণ্য স্থানে ৭ দিন করে ধ্যান করেন। ষষ্ঠ সপ্তাহে মুং জা লিংদা পুকুরে ধ্যানমগ্ন থাকাকালীন প্রবল ঝড় শুরু হয়। এ সময় গৌতম বুদ্ধকে ঝড়ের কবল থেকে রক্ষার জন্য নাগরাজ গৌতম বুদ্ধের মস্তকের উপর ফণা তুলে এক সপ্তাহ ছিলেন। এ থেকে গৌতম বুদ্ধের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর রাখাইনরা মুং জা লিংদা পুকুরে বর্ষাব্রত পালন করেন।মন্দিরের ভেতরের প্রতিটি স্থাপনার নিপুণ কারুকাজ আপনাকে মুগ্ধ করবে। 

কীভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ধরে আরাকান সড়ক দিয়ে চকরিয়া থানা রাস্তার মাথা হয়ে বদরখালী ব্রীজ হয়ে কালারমা ছড়া অথবা শাপলাপুর রাস্তা দিয়ে সরাসরি মহেশখালী আসা যায়। অথবা কক্সবাজার সদর থেকে কস্তুরা ঘাট বা ৬নং ঘাট বা উত্তর নুনিয়া ছড়া সরকারি জেটি ঘাট থেকে স্পীডবোটে মহেশখালী আসা যায়। ঘাট থেকে যে কোনো রিকশায় বৌদ্ধ মন্দিরে যেতে পারবেন।