আন্তর্জাতিক

ভয়াবহ সংঘাত বন্ধে আলোচনায় বসতে সম্মত থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘাত তৃতীয় সপ্তাহে গড়ানোর পর, উভয় দেশের কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি পুনরুজ্জীবিত করার সম্ভাবনা নিয়ে বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছেন। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাসাক ফুয়াংকেটকেও এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর বিবিসির।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় জুলাইয়ের শুরুতে উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতে নতুন করে ভয়াবহ সংঘাত শুরু হলে, যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায়। এ ঘটনার জন্য উভয় দেশ একে অপরকে দোষারোপ করেছে।

আজ সোমবার মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা একটি বৈঠকে মিলিত হন। চলতি মাসের শুরুতে নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ার পর এটিই ছিল দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক।

বৈঠক শেষে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাসাক ফুয়াংকেটকেও জানান, আগামী সপ্তাহে দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, যেকোনো নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর আগে এই সামরিক আলোচনা অত্যন্ত জরুরি।

অক্টোবরের চুক্তির ব্যর্থতা ও মার্কিন ভূমিকা

গত জুলাই মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশ একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল, যা অক্টোবরে ‘কুয়ালালামপুর শান্তি চুক্তি’ হিসেবে পরিচিতি পায়। তবে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

তিনি দাবি করেন, “জুলাইয়ের যুদ্ধবিরতি চুক্তি তড়িঘড়ি করে করা হয়েছিল, কারণ যুক্তরাষ্ট্র অক্টোবরে ট্রাম্পের মালয়েশিয়া সফরকালীন সময়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করতে চেয়েছিল।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, মাঠপর্যায়ের প্রকৃত পরিস্থিতি বিবেচনা না করে চুক্তি করায় তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তিনি বলেন, “আমাদের এমন একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে যা সত্যিই কার্যকর হবে।”

কম্বোডিয়া এখনও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

বর্তমান পরিস্থিতি ও মানবিক সংকট

ডিসেম্বরের শুরু থেকে ৮০০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা জুড়ে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক গোলাবর্ষণ চলছে। থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ান অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলাও চালাচ্ছে। কম্বোডিয়া রকেট হামলার মাধ্যমে পাল্টা জবাব দিচ্ছে। নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ।

নতুন করে সংঘটিত যুদ্ধের জন্য উভয় দেশ একে অপরকে দোষারোপ করেছে।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও মধ্যস্থতা

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ান এই পরিস্থিতিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আসিয়ান-এর বর্তমান সভাপতি মালয়েশিয়া।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা যাদের সেবা করি তাদের পরিস্থিতির অবনতি হলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিবেচনা করা উচিত।” 

১৯৬৭ সালে আসিয়ান প্রতিষ্ঠার পর এটিই সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত। এটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা জোটের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য একটি গুরুতর আঘাত। এই সংকট নিরসনে জোটের সব সদস্যের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই সংঘাত থামানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। চীনের বিশেষ দূত দেং সিজুন সম্প্রতি নমপেন সফর করেছেন এবং বেইজিং থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে যাবে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, এই মাসে যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে চীন নিজস্ব উপায়ে এই সংঘাতের মধ্যস্থতা করে আসছে। তিনি আরো বলেন, বেইজিং ‘যথাসময়ে’ দেং কর্তৃক পরিচালিত মধ্যস্থতার তথ্য প্রকাশ করবে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত বিরোধ শত বছরের পুরোনো। তবে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাত নিরসনে আগামী সপ্তাহের সামরিক বৈঠকটি এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।