সারা বাংলা

ঠাকুরগাঁওয়ে ঘন কুয়াশা, দুপুরেও দেখা নেই সূর্যের

পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে প্রচণ্ড শীত। গত কয়েকদিন ধরে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকছে ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। গত তিনদিন ধরে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। সকাল গড়িয়ে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দেখা মিছলে না সূর্যের। 

স্থানীয়রা জানান, দুপুরের পর সাময়িকভাবে সূর্যের দেখা মিললেও তাপমাত্রা খুব একটা বাড়ে না। হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা সারাদিনই অনুভূত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ, খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চালক। 

সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার (২৩  ডিসেম্বর) সকালে ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে ঠাকুরগাঁও শহরসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চল। রাস্তাঘাট নীরব, কুয়াশার কারণে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। অধিকাংশ গাড়ি চলছিল হেডলাইট জ্বালিয়ে।

স্থানীয় শ্রমিক খয়রুল ইসলাম বলেন, “শীত ও প্রচণ্ড কুয়াশার মধ্যে ভোরে কাজের জন্য বের হতে খুব কষ্ট হয়। গরম কাপড় নেই, শরীর কাঁপে। কাজ না করলে খাবার জোটে না।”

অটোরিকশা চালক জামিনি রায় বলেন, “কুয়াশায় সামনে কী আছে স্পষ্ট দেখা যায় না। গাড়ি চালাতে হাত-পা অবশ হয়ে যায়। আবার গাড়ি না চালালে সংসার চলে না। আগে দিনে যেখানে ৮০০–৯০০ টাকা ভাড়া মারতাম, এখন ঠান্ডার কারণে তেমন কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তাই ভাড়াও কমে গেছে। এখন দিনে ৪০০–৫০০ টাকা আয় করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।”

হেডলাইট জ্বালিয়ে কুয়াশা ভেদ করে যাচ্ছে একটি ট্রাক

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজনীন ইসলাম নাদিয়া বলেন, “ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ছে। ঘন কুয়াশায় সকাল বেলা রাস্তাঘাট দেখা যায় না, ফলে দ্রুত গাড়িও পাওয়া যায় না। বর্তমানে কলেজ বন্ধ থাকলেও সকালে প্রাইভেট পড়তে যেতে সমস্যা হচ্ছে।”

শীতের প্রভাব পড়েছে কৃষিক্ষেত্রেও। ভূট্টা ও আলুর ক্ষেতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। শীত আরো বাড়লে বড় ধরনের ফসলহানির আশঙ্কা তাদের।

সদর উপজেলার নারগুণ এলাকার কৃষক ধলা বর্মন জানান, “আলুর ক্ষেতে পাতা কুঁকড়ে ও ঝলসে যাচ্ছে। গোড়া পচে যাচ্ছে। শীত আরো বাড়লে ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।”

একই এলাকার কৃষক সামাদ বলেন, “ভুট্টা গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিষের যা দাম, তাতে এক বিঘা জমিতে একবার স্প্রে দিতে ২ হাজার টাকার কম হচ্ছে না।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে আলু আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ২৭ হাজার ৮১০ হেক্টর। ভুট্টা আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৬ হাজার ৩৮০ হেক্টর এবং আবাদ হয়েছে ৪২ হাজার ৫৮০ হেক্টর। বোরো বীজতলা করা হয়েছে ২৮১ হেক্টর জমিতে এবং শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শীতকালীন রোগবালাই মোকাবিলায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে তদারকি জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছাম্মাৎ শামীমা নাজনীন জানান, ফসলের ক্ষতি কমাতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের আতঙ্কিত না হয়ে পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরগাঁওয়ের হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালে আসছেন রোগীরা।

২৫০ শয্যার ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. মো. রকিবুল আলম (চয়ন) বলেন, “শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে শীতজনিত রোগের ঝুঁকি বেশি। সবাইকে গরম কাপড় পরা, মাস্ক ব্যবহার এবং আগুন পোহানোর সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”