বাংলাদেশ থেকে বিশ্বমঞ্চে বিজ্ঞানের জয়গান প্রচার করবেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ গবেষক জাকারিয়া আলম বাপ্পি। সম্প্রতি তিনি আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি (ASM) কর্তৃক ২০২৬ বর্ষের জন্য ‘ইয়ং ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার এই অর্জন কেবল মাত্র একটি পদবি নয় বরং বিশ্বজুড়ে অণুজীব বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
জাকারিয়া আলম বাপ্পি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোট থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আসক্ত ছিলেন বাপ্পি। পরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের রহস্যময় জগৎ তাকে টানত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই তিনি নিজেকে গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করেন। মাইক্রোবায়োলজি বা অণুজীববিজ্ঞানের প্রতি বিশেষ অনুরাগ তাকে আজ এই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে দিয়েছে।
আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি বা (ASM) হলো বিশ্বের অন্যতম পুরোনো এবং বৃহত্তম জীবন বিজ্ঞান সংস্থা। এটি মূলত অণুজীব বিজ্ঞানী এবং সংশ্লিষ্ট পেশাদারদের একটি বিশ্বজনীন নেটওয়ার্ক। এই সোসাইটির ‘ইয়ং ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে নির্বাচিত হওয়া অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক একটি বিষয়। বাপ্পি এখন তার ক্যাম্পাসে ASM-এর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবেন বলে জানান। এই নতুন যাত্রায় জাকারিয়া আলম বাপ্পির লক্ষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি দেশি-বিদেশি অণুজীব বিজ্ঞানীদের সাথে শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধন তৈরি করা, অণুজীব বিজ্ঞানের গুরুত্ব ও এই খাতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক বিভিন্ন ওয়ার্কশপ আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের গবেষণার মানোন্নয়নে সহায়তা করাসহ নানা ধরনের কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চান।
বাপ্পির এই অর্জন নিয়ে তার সহপাঠী ও শিক্ষকরা অত্যন্ত আনন্দিত। বিভাগের শিক্ষকরা মনে করেন, বাপ্পির এই সাফল্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের গবেষণায় অনুপ্রাণিত করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করবে।
আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি (American Society for Microbiology-ASM)-এর কান্ট্রি অ্যাম্বাসেডর টু বাংলাদেশ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিন্নাতুল করিম আকন্দ বলেন, “আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি (American Society for Microbiology-ASM)-এর ইন্টারন্যাশনাল ইয়াং অ্যাম্বাসাডর হিসেবে আমার বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া আলম নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী অল্পসংখ্যক উদীয়মান বিজ্ঞানীর মধ্য থেকে এই সম্মানজনক পদে নির্বাচিত হওয়া তার মেধা, নেতৃত্বগুণ এবং মাইক্রোবায়োলজি ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি। এতে তিনি মাইক্রোবায়োলাজি শিক্ষা ও গবেষণা প্রসারে ভূমিকা রাখবেন, আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা জোরদার করবেন, তরুণ গবেষক ও শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবেন এবং বৈশ্বিক বিজ্ঞানসমাজের সঙ্গে ASM-এর সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধনের দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করি।”
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জাকারিয়া বলেন, “বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা আর কঠোর পরিশ্রমের ফল এই প্রাপ্তি। আমি চাই আমার অর্জিত জ্ঞান দিয়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কোনো সুযোগ তৈরি করতে। অণুজীব বিজ্ঞানের এই বিশাল জগতকে সাধারণ মানুষের কাছে আরো সহজবোধ্য ও প্রয়োজনীয় হিসেবে তুলে ধরাই আমার মূল লক্ষ্য।
তিনি আরো বলেন, আমি প্রধানত জীবন বিজ্ঞানের আধুনিক ও জটিল শাখাগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমার আগ্রহের প্রধান ক্ষেত্রগুলো হলো ন্যানো-বায়োটেকনোলজি ও মলিকুলার নিউরোসাছেহ্ন, ক্যান্সার বায়োলজি ও ইনফেকশাস ডিজিজ, কম্পিউটেশনাল বায়োলজি।”
বাপ্পি তার শিক্ষা জীবনে অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছেন। এগ্রিভেঞ্চার ২০২৫-এ ওরাল প্রেজেন্টেশনে এবং কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কনফারেন্সে পোস্টার প্রেজেন্টেশনে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এছাড়াও, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত বিভিন্ন সায়েন্স ফেস্ট ও কনফারেন্সে তিনি রানার-আপ ও শীর্ষস্থান অর্জন করেছেন। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সোসাইটির (IURS) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তার বেশ কিছু গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে ডায়াবেটিস ও নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার এবং অনকোপ্রোটিন নিয়ে তার কাজগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।