নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা বিএনপি। একই সঙ্গে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ফখরুল ইসলামের পক্ষে নোয়াখালী-৫ আসনের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো।
এ সময় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুন অর রশিদসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মাহবুব আলমগীর আলো বলেন, “সারা দেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনি সময় অতিক্রম করছে। বিএনপি ও ধানের শীষের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নোয়াখালী জেলার ছয়টি আসনেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু যারা দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের একটি অংশ দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে অসহযোগিতা, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “নোয়াখালী-৫ আসনের প্রার্থী মো. ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি সেই ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রেরই অংশ। উদ্দেশ্য একটাই—জনপ্রিয় এই নেতাকে বিতর্কিত করে নির্বাচনি মাঠ থেকে দুর্বল করা।”
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মনোনীত প্রার্থী মো. ফখরুল ইসলাম বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে সব সময় ছিলেন। মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের আইনি ও মানবিক সহায়তা দিয়েছেন তিনি।”
মাহবুব আলমগীর বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ফখরুল ইসলাম নিজেও কারাবরণ করেছেন। তার ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারপরও দলের প্রতি আনুগত্য ও নেতাকর্মীদের প্রতি সহানুভূতি থেকে তিনি কখনো পিছপা হননি।”
তিনি জানান, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মো. ফখরুল ইসলাম একজন সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং নেতৃত্ব দেন।
এমন একজন জুলাই যোদ্ধাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের হওয়া একটি জুলাই হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে—যা অত্যন্ত বিস্ময়কর ও হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক।
তিনি বলেন, “যিনি শেখ হাসিনার সরকারের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, তার বিরুদ্ধেই এমন মামলা নোয়াখালী-৫ আসনের বিএনপি নেতাকর্মীদের গভীরভাবে মর্মাহত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়, মো. ফখরুল ইসলামের জনপ্রিয়তা ও নির্বাচনী সম্ভাবনাকে ক্ষুণ্ন করতেই এই মামলা করা হয়েছে। তবে সব ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নোয়াখালী-৫ আসনের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে এবং থাকবে।
বক্তব্যে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণের রায়ে সব অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় আলমগীর শেখ নামের একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী এলাকার মো. সোহানুর রহমান সিফাত বাদী হয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা ওই মামলায় নোয়াখালী-৫ আসনের বিএনপি প্রার্থী মো. ফখরুল ইসলাম ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আলম শিকদারকে আসামি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য বেলায়েত হোসেন স্বপন, বসুরহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল মতিন লিটন এবং সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ স্থানীয় বিএনপির নেতারা।