প্রেক্ষাগৃহে বসে সিনেমা দেখছেন দর্শকরা। পর্দায় চলছে ‘অ্যাভাটার’ সিনেমার তৃতীয় কিস্তি। অ্যাভাটার ফ্র্যাঞ্চাইজির কেন্দ্রীয় চরিত্র জেক সালির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছেন বলিউড অভিনেতা গোবিন্দ। তাকে দেখে প্যান্ডোরার আদিবাসী না’ভির কোনো একটি গোত্রের সদস্য মনে হচ্ছে। আদিবাসীদের মতো তার মুখ ও শরীরে নীল রং মাখানো।
মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে (টুইটার) ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও ক্লিপে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ভিডিও শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে—‘অ্যাভাটার’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এ ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেছেন গোবিন্দ। তারপর থেকে জোর চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। গোবিন্দর ভিডিও ক্লিপ দেখে অনেকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন—গোবিন্দ কি সত্যি ‘অ্যাভাটার’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও পর্যবেক্ষণ করেছে রাইজিংবিডি। যে ভিডিওতে জেক সালির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গোবিন্দকে কথা বলতে দেখা যায়, সেই ভিডিওটি ভালোভাবে দেখলেই বেশ কটি অসঙ্গতি চোখে পড়ে। এক. গোবিন্দ দ্রুত কথা বলছেন, যা অস্বাভাবিক। লিপসিং সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দুই. গোবিন্দর মাথার প্রত্যেক পাশে দুটো করে কান রয়েছে। একটি দেখতে প্যান্ডোরার আদিবাসী না’ভিদের মতো, অন্যটি সাধারণ মানুষের কানের মতো। তিন. গোবিন্দর চোখ দুটো তার আসল চোখ, প্যান্ডোরার আদিবাসী না’ভিদের চোখের মতো নয়। জেমস ক্যামেরনের মতো নির্মাতা এমন হাস্যকর কিছু করবেন তা ভীষণ বোকার মতো ভাবনা!
এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেখতে যতই বিশ্বাসযোগ্য লাগুক আর সোশ্যাল মিডিয়ায় যতই ভাইরাল হোক, এই ক্লিপগুলোর কোনোটাই সত্যি নয়। ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ সিনেমায় কোনোভাবেই নেই গোবিন্দ। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া সব ভিডিও ও ছবি সম্পূর্ণভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি করা। আর এসব কাণ্ড ভক্তরা মজা করার জন্য করেছেন।
ভক্তদের এই রসিকতায় হাওয়া দিয়েছে গোবিন্দর পুরোনো একটি সাক্ষাৎকার। কারণ মুকেশ খান্নার সঙ্গে আলাপচারিতায় গোবিন্দ বলেছিলেন, “জেমস ক্যামেরন তার ‘অ্যাভাটার’ সিনেমায় আমাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি ২১.৫ কোটি রুপির প্রস্তাব ছেড়ে দিয়েছিলাম। কারণ ব্যাপারটা কষ্টদায়ক ছিল।”
ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে গোবিন্দ বলেছিলেন, “আমি আমেরিকায় এক সর্দারজির সঙ্গে দেখা করেছিলাম, তাকে মিষ্টি ও খাবারের ব্যবসার একটা আইডিয়া দিয়েছিলাম। কয়েক বছর পর তিনি বললেন, ‘সেই আইডিয়া তার জন্য দারুণ কাজ করেছে।’ সেখানেই জেমস ক্যামেরনের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি আমাকে জেমসের সঙ্গে একটি সিনেমাও করতে বলেছিলেন, তাই আলোচনার জন্য আমি তাদের ডিনারে আমন্ত্রণ জানাই।”
সিনেমাটির নামও গোবিন্দ দিয়েছিলেন। এ তথ্য উল্লেখ করে গোবিন্দ বলেছিলেন, “তিনি (জেমস ক্যামেরন) বলেছিলেন শুটিং চলবে ৪১০ দিন। আমি বলেছিলাম ঠিক আছে। কিন্তু শরীর রং করতে হলে তো আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে!”
তবে গোবিন্দর স্ত্রী সুনীতা আহুজা স্বামীর এসব বক্তব্যের বিরোধিতা প্রকাশ্যে করেন। উরফি জাভেদের একটি পডকাস্টে তিনি বলেছিলেন, “আরে ইয়ার, কবে এই অফারটা এসেছিল আমি তো জানিই না। গোবিন্দর সঙ্গে আমার তো ৪০ বছর হয়ে গেল। অ্যাভাটারের পরিচালক-প্রযোজক কবে এসেছিলেন, আমার জানা নেই। আদৌ এসেছিলেন কি না, সেটাও জানি না।”
সুনীতা আহুজা নিজের অবস্থান জোরালোভাবে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “আমি মিথ্যা বলি না, আর কারো পক্ষও নিই না। আমি মিথ্যার সঙ্গে নেই।”
কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক মহাকাব্যিক সিনেমা ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘অ্যাভাটার’। এটি নির্মাণ করেছেন ‘টাইটানিক’খ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরন। ২০০৯ সালে এ ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম কিস্তি মুক্তির পর বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমায় পরিণত হয়। ১৩ বছরের বিরতি নিয়ে নির্মিত হয় দ্বিতীয় কিস্তি; নাম রাখা হয়—‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’। তারপর তিন বছরের প্রতীক্ষা। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’।