আন্তর্জাতিক

দিপু চন্দ্র দাসকে আসলেই কী জনতার হাতে তুলে দিয়েছিল পুলিশ?

গত সপ্তাহে বাংলাদেশে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা নিয়ে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ভারতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হয়, ‘ভুক্তভোগী দিপু চন্দ্র দাস পুলিশের কাছে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন’।

কিন্তু দিপু চন্দ্র দাসকে কী আসলেই বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে তুলে দিয়েছিল বাংলাদেশের পুলিশ? এ নিয়ে ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য উইক। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২৭ বছর বয়সী বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসের ‘শেষ ভিডিও’ হিসেবে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়। ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে বারবার পুলিশকে বলতে দেখা যায় যে, তিনি নির্দোষ এবং কোনো অপরাধ করেননি।

ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, তার আকুতি সত্ত্বেও পুলিশ তাকে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেয়, যারা তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কারখানার সামনে বিক্ষোভ করছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ব্যাপকভাবে শেয়ার করা এই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়, “দিপু চন্দ্র দাস কাঁদছিলেন, আকুতি করছিলেন, নির্দোষ বলছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ তাকে কট্টরপন্থি মুসলিম জনতার হাতে মৃত্যুর জন্য তুলে দেয়।”

দিপু চন্দ্র দাস গত ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে নিহত হন। উত্তেজিত জনতা তাকে পিটিয়ে হত্যার পর একটি গাছে বেঁধে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক এবং গত বছরের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভের মধ্যেই দিপু চন্দ্র দাসের ওপর এই হামলা চালানো হয়। 

ভারতের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) যুব শাখার জাতীয় সম্পাদক তাজিন্দর বাগ্গাসহ অনেক নেটিজেন ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করেন, বাংলাদেশের পুলিশ দিপু চন্দ্র দাসকে ক্ষুব্ধ জনতার কাছে অসহায় অবস্থায় ফেলে চলে গেছে।

প্রকৃত সত্য কী?

দুটি ফ্যাক্ট-চেক সংস্থার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দিপু চন্দ্র দাসের নয়। এটি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল মমিন-এর একটি পুরোনো ভিডিও। ফ্যাক্ট-চেক সংস্থা অল্টনিউজ এবং বুম নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওর সঙ্গে ময়মনসিংহের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।

অল্টনিউজ জানিয়েছে, ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তাদের তদন্তে দেখা গেছে, ভিডিও ফুটেজটি ময়মনসিংহের ঘটনার এক মাস আগের। ওই রাতে মমিনের আরো কিছু ভিডিও পাওয়া গেছে যা প্রমাণ করে যে, এটি নভেম্বর মাসে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে চলা আন্দোলনের সময় ধারণ করা। ভিডিওতে শিক্ষার্থীর পরনে থাকা জার্সির পেছনে ‘মমিন’ নামটি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

বুম জানিয়েছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এআইজি শাহাদাত হোসেন নিশ্চিত করেছেন যে, ভিডিওটি দিপু চন্দ্র দাসের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

দিপু চন্দ্র দাসের পরিবারের দায়িত্ব নেবে সরকার

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা সি. আর. আবরার গতকাল দিপুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ডকে ‘অমার্জনীয় এবং নৃশংস অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, সরকার দিপুর সন্তান, স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের পাশে থাকবে। 

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ও নিশ্চিত করেছে যে, পরিবারটি আর্থিক অনুদান এবং দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা পাবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

হাদির মৃত্যু এবং দিপুর হত্যাকাণ্ডের পর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের আরো অবনতি হয়েছে। উভয় দেশ একে অপরের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এবং ভিসা পরিষেবা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।