২০২৫ সাল যেন বৈভব সূর্যবংশীর জন্য ‘ইজি মোডে’ খেলা কোনো ভিডিও গেম। বছর যত এগোচ্ছে, ততই ভলিউম বাড়াচ্ছে ১৪ বছর বয়সী এই কিশোর বিস্ময়। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) তিনি এমন এক ইনিংস খেললেন, যা শুধু রেকর্ডবইই নয়; সময়ের ধারণাকেও যেন ওলটপালট করে দিল।
বিজয় হাজারে ট্রফিতে ইতিহাসের দ্রুততম লিস্ট- এ ১৫০ রান করে এবি ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ড ভেঙে ক্রিকেট বিশ্বে তুমুল আলোড়ন তুলেছেন বৈভব। আর ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই আলোচনা আর ‘বিশেষ’ হওয়া নিয়ে নয়; প্রশ্ন একটাই, ভারতীয় দলে তাকে কত দ্রুত তুলে আনা উচিত?
এই পারফরম্যান্সের পরই সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ তিনি এমন এক তুলনা টানেন, যা শুনে সবাই চমকে ওঠে, “শেষবার ১৪ বছর বয়সে এমন বিস্ময়কর ক্রিকেট প্রতিভা দেখিয়েছিল একজন; শচীন টেন্ডুলকার। আর আমরা জানি, তার পরিণতি কী হয়েছিল। তাহলে আর কীসের অপেক্ষা? ভারতের হয়ে বৈভব সূর্যবংশী!”
শুধু মন্তব্য করেই থামেননি থারুর। তিনি গৌতম গম্ভীর ও অজিত আগরকারকে ট্যাগ করে কার্যত আহ্বান জানিয়েছেন অবশ্যম্ভাবী বিষয়টিতে আর দেরি না করতে।
টেন্ডুলকারের নাম যখন আলোচনায় আসে, তখন বোঝাই যায় কিছু অসাধারণ ঘটছে। বিজয় হাজারে ট্রফিতে বিহারের ওপেনার হিসেবে বৈভব সূর্যবংশী ছিলেন এক কথায় অপ্রতিরোধ্য। মাত্র ৮৪ বলে ১৯০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। হাঁকান ১৫টি ছক্কা। লিস্ট-এ ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম ১৫০ রানের মালিক এখন বৈভবই।
১৪ বছর বয়সে তার ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, যেন এক দশকের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। পেস, স্পিন, লেন্থ কোনো কিছুই তাকে থামাতে পারেনি। বল যদি তার আর্কে আসে, গ্যালারিতে যাওয়া ছিল নিশ্চিত।
এই রেকর্ডযজ্ঞে বৈভব একা ছিলেন না। বিহারের ব্যাটাররা প্লেট গ্রুপের ম্যাচটিকে পরিণত করেন রীতিমতো রান-উৎসবে। অধিনায়ক সাকিবুল গনি খেলেন ৪০ বলে ১২৮ রানের ঝড়ো ইনিংস, মাত্র ৩২ বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। যা লিস্ট-এ ক্রিকেটে কোনো ভারতীয়র দ্রুততম শতক।
উইকেটকিপার আয়ুষ লোহারুকা করেন ৫৬ বলে ১১৬। কিন্তু এমন দিনে এসব ইনিংসও আড়ালে চলে যায়, যখন একের পর এক রেকর্ড ভাঙে। শেষ পর্যন্ত বিহারের স্কোরবোর্ডে উঠে ৫৭৪/৬, যা লিস্ট-এ ক্রিকেটের নতুন বিশ্বরেকর্ড দলীয় সংগ্রহ। আগের সর্বোচ্চ ছিল তামিলনাড়ুর ৫০৬/২। সেটিও অরুণাচল প্রদেশের বিপক্ষে।
হ্যাঁ, প্রতিপক্ষ আক্রমণ শক্তিশালী ছিল না, ম্যাচটি ছিল প্লেট গ্রুপে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এই পর্যায়েও সবাই এমনটা করতে পারে না। ৫০ ওভারের ম্যাচে সাদা বলে টি-টোয়েন্টির স্ট্রাইক রেটে ১৯০ রান করা নিছক প্রতিভা নয়, এটি ব্যতিক্রমী প্রতিভার পরিচয়।
ভারত বরাবরই কিশোর প্রতিভাদের ক্ষেত্রে সতর্ক এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু পারফরম্যান্স দরজায় আলতো করে কড়া নাড়ে না, সোজা ভেঙে ঢুকে পড়ে। বৈভব সূর্যবংশী এখন আর ‘ভবিষ্যতের নাম’ নন, তিনি বর্তমানের আলোচনার কেন্দ্রে।
ভারত জাতীয় দলে ডাক এখন আসুক বা একটু পরে; একটি বিষয় পরিষ্কার, ২০২৫ সাল বৈভব সূর্যবংশীর। ১৪ বছরেই যদি এমনটা হয়, তাহলে বাকি ক্রিকেট বিশ্বকে এখনই প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ এই কিশোর তারকা নিজের আগমনের ঘোষণা দিয়েছেন জোরালোভাবে, স্পষ্টভাবে।