রাজবাড়ীর পাংশা থানা এলাকায় গণপিটুনিতে সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাটের নিহত হওয়ার ঘটনাকে ‘একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে বিভ্রান্তিকর, উস্কানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে অন্তর্বতী সরকার।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতের ওই হত্যাকাণ্ডের পর এ নিয়ে দেশের ভেতরে ও ভারতের সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে অবস্থান পরিষ্কার করেছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতোপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা এবং চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।”
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল একটি পাইপগানসহ আটক করে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।
আরো বলা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যে কোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, একইসঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ- এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে, বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
রাজবাড়ীর পাংশা থানার কলিমহরে গণপিটুনিতে সম্রাট বাহিনীর প্রধান অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট (২৯) নিহত হয়েছেন। এ সময় দুটি অস্ত্রসহ তার সহযোগী সেলিমকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা।
পাংশা থানার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে উপজেলার হোসেনডাঙ্গা পুরাতন বাজার এলাকায় একটি বাড়িতে চাঁদার দাবিতে হাজির হলেও ওই বাড়ির লোকজন ডাকাত ডাকাত বলে চিকিৎকার দেয়। তখন আশপাশের লোকজন এসে গণপিটুনি দেয় অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাটকে। এতে তার মৃত্যু হয়।
অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাট পাংশার হোসেনডাঙ্গার অক্ষয় মন্ডলের ছেলে।
সম্রাটের নিহতের ঘটনা নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে, বাংলাদেশে আরেকজন হিন্দুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সম্রাটের ঘটনার সঙ্গে ময়মনসিংহের দিপু চন্দ্র দাসের ঘটনা জড়িয়ে বাংলাদেশকে হিন্দুদের জন্য অনিরাপদ হিসেবে বর্ণনা করার চেষ্টা দেখা গেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।
তবে পাংশা থানা পুলিশ বলছে, নিজের নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে এলাকাসহ আশপাশে ভয়ভীতি দেখিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে সম্রাটের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন তিনি ভারতে পালিয়ে ছিলেন। সম্প্রতি এলাকায় ফিরে একটি বাড়িতে চাঁদা দাবি করেন।
পাংশা মডেল থানার ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘‘সন্ত্রাসী অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাটের নামে হত্যাসহ একাধিক মামলা ছিল। তার সহযোগী সেলিমকে একটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটার গানসহ আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় একাধিক মামলা করা হয়েছে।”