গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা ফরিদ সরকারকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পরিবার। তাদের ভাষ্য, মৃত্যুর আগে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে ফোন করেছিলেন তিনি।
ফরিদকে হত্যার ঘটনায় নিহতের বড়ভাই ফারুক হোসেন বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) শ্রীপুর থানায় ছয়জনের নামে মামলা করেছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আরো পড়ুন: গাজীপুরে ইটভাটায় জাসাস নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা
নিহত ফরিদ শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং একই ইউনিয়ন জাসাসের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদের বাবা জামাল উদ্দিন সরকার সাংবাদিকদের জানান, ভোগদখলীয় প্রায় ৮ বিঘা জমি নিয়ে প্রতিবেশী আনোয়ারের সঙ্গে তাদের পরিবারের তিন থেকে চার বছর ধরে বিরোধ চলছিল।
তিনি বলেন, “গত ১৬ নভেম্বর আনোয়ার আমার বাড়ির পাশে আমাকে ও আমার বড় ছেলেকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়। পরদিন ফরিদ আমাদের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করলেও পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। আজ যদি সেই জিডির গুরুত্ব দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো আমার ছেলেকে হারাতে হতো না।” মৃত্যুর আগে ফরিদ স্থানীয় ইউপি সদস্যকে ফোন করেছিলেন বলেও জানান তিনি।
গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খোরশেদ আলম রফিক জানান, আহত অবস্থায় ফরিদ তাকে ফোন করে বলেন, ‘তারা ডাকাত’ নামে এক ব্যক্তি তাকে কুপিয়েছে এবং তার ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
তিনি জানান, কেবিএম ব্রিকস ইটভাটার ম্যানেজার অজিত সরকার প্রথমে তাকে ফোন করে ঘটনার কথা জানান। পরে ফরিদ নিজেই ম্যানেজারের ফোন নিয়ে হামলাকারীদের নাম নিশ্চিত করেন।
পরিবার ও স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের দুই-তিনদিন আগে থেকে ফরিদ লতিফপুর গ্রামের কেবিএম ব্রিকস ইটভাটায় মাটি সরবরাহের কাজ তদারকি করছিলেন। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোরে সন্ত্রাসীরা তাকে ফোন করে ইটভাটায় ডেকে নেয়। সেখানে রামদা ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে ফরিদকে গুরুতর আহত করে তারা। পরে পরিবারের তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে যান। সেখানকার চিকিৎসক ফরিদকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- তারা ডাকাত (৪০), আনোয়ার (৫০), হালিম (৫৫), মোতাহার মাস্টার (৬০), হৃদয় হাসান জয় (২০) ও টিটু (২৫)। ঘটনার পর থেকেই প্রধান আসামিসহ অধিকাংশ অভিযুক্ত পলাতক।
শ্রীপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মতিউর রহমান জানান, বুধবার ভোরে একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্যদের ধরতে একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসির আহমদ বলেন, “ঘটনার পর ইটভাটার ম্যানেজার ও কয়েকজন শ্রমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তদন্তের স্বার্থে পরে তাদের স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।”
গাজীপুরের কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেরাজুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেই সূত্র ধরেই আমরা এগোচ্ছি। খুব শিগগিরই জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”
শ্রীপুর উপজেলা জাসাসের আহ্বায়ক হেলাল প্রধান অভিযোগ করে বলেন, “হত্যার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও প্রধান আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক ও সামাজিক অপরাধ। আমরা দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”