জাতীয়

‘জনগণের ডাক্তার’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ৮৪তম জন্মদিন আজ

বীর মুক্তিযোদ্ধা, ওষুধনীতির উদ্যোক্তা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ‘জনগণের ডাক্তার’ হিসেবে খ্যাত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ৮৪তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলাধীন কয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হুমায়ুন মোর্শেদ চৌধুরী এবং মাতা হাসিনা বেগম চৌধুরী।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা এগারোটায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে স্মরণ করে তার ৮৪তম জন্মদিনে কথা জানানো হয়।

পোস্টে বলা হয়, ‘গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের ‘বড় ভাই’ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এর ৮৪তম জন্মদিন আজ, যিনি চিকিৎসা, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতাকে একসূত্রে গেঁথে একটি প্রতিষ্ঠান নয়, একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।’

পোস্টে আরো বলা হয়, ‘স্বাস্থ্যকে তিনি দেখেছিলেন মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে, দান বা দয়ার বস্তু হিসেবে নয়। ওষুধনীতি থেকে গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষা থেকে মুক্তচিন্তা, প্রতিটি ক্ষেত্রে তার নেতৃত্ব ছিল আপসহীন, সাহসী ও জনপক্ষের। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আজও যে আদর্শে পথ চলে, তার মূলে আছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী- একজন প্রতিষ্ঠাতা, এক জনযোদ্ধা, এক অনিবার্য নৈতিক কণ্ঠস্বর। শুভ জন্মদিন। আপনার আদর্শই আমাদের শক্তি, আমাদের দিকনির্দেশনা।’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর এফআরসিএস পড়ার জন্য তিনি লন্ডন যান। 

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। লন্ডনে থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন। পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করে লন্ডনের সড়কে বাঙালিদের এক র‌্যালিতে অংশগ্রহণ অবস্থায় প্রকাশ্যে পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। একপর্যায়ে তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসে প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মনস্থির করেন। এদিকে ত্রিপুরার মেলাগরে ছিল মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের হেডকোয়ার্টার্স। যুদ্ধাহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা এবং সেবাদানের লক্ষ্যে খালেদ মোশাররফের উদ্যোগে সেখানে বাঁশ ও খড় দিয়ে নির্মাণ করা হয় বাংলাদেশের ফিল্ড হাসপাতাল। 

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর সাভারে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এক ব্যতিক্রমধর্মী হাসপাতাল। নাম ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’। ঢাকার নগর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তারই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। তার প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রতিষ্ঠানের তিনি মালিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্যমাত্র। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ছাড়া তার অন্য একটি মাইলফলক অবদান হলো এরশাদ সরকারকে দিয়ে ১৯৮২ সালে জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়ন। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বিকাশে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বাধীনতা পদক, র‌্যামন ম্যাগসাসে অ্যাওয়ার্ড, সুইডেন সরকারের পুরস্কার, কানাডার ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ন্যাচারাল মেডিসিন পুরস্কার পেয়েছেন। ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল তিনি মারা যান।