খেলাধুলা

প্রিয় কোচ হারিয়ে স্তব্ধ মাশরাফি-মোস্তাফিজ-সাকিব-তামিমরা

জাতীয় দলে কাজ করার প্রবল ইচ্ছা ছিল মাহবুব আলী জ‌্যাকির। এজন‌্য আবেদনও করেছিলেন। সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব‌্যাটে-বলে হয়নি। আর সুযোগও নেই।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের খেলা চলাকালীন হার্ট অ‌্যাটাকে মৃত্যু হয় ঢাকা ক‌্যাপিটালসের সহকারী কোচ জ‌্যাকির। মাঠে খেলা শুরুর আগে লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতাল নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।

২০০৮ সাল থেকে জ‌্যাকি কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গেম ডেভেলাপমেন্ট বিভাগে। মূলত পেস বোলারদের জন‌্য বিশেষজ্ঞ কোচ ছিলেন জ‌্যাকি। সেকালের মাশরাফি, রবিউল, নাজমুল, রুবেল, শাহাদাতদের নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল। এরপর তাসকিন, মোস্তাফিজুর, আবু হায়দার, ইবাদত, খালেদদের নিয়ে কাজ করেছেন। সেখান থেকে শরিফুল, হাসান, তানজিমদের আস্থার প্রতীক হয়ে হয়েছেন। যুব দল যেবার বিশ্বকাপ জিতল। ওই সময়ে দুই বছর দলের পেস বোলিং কোচ ছিলেন জ‌্যাকি।

পেসারদের সঙ্গে সখ‌্যতা বেশি থাকলেও বাকিদের খুব কাছের ছিলেন তিনি। তার স্নেহ, ভালোবাসা, আদর, শিক্ষা পেয়েছেন আশেপাশের সবাই। তাইতো তার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুরো ক্রিকেটাঙ্গন। প্রিয় কোচকে হারিয়ে কাঁদছেন ক্রিকেটাররা।

বোলিং নিয়ে জ‌্যাকির সঙ্গে অনেক কথা বলতেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। কথোপকথনের স্মৃতি মনে করলেন মাশরাফি, “জাকি ভাই, জীবনে আপনার সঙ্গে বোলিং নিয়ে কতবার কথা বলেছি, তার কোনো হিসাব নেই। বোলিংয়ের বায়োমেকানিক্স বাংলাদেশে সম্ভবত আপনিই সবচেয়ে ভালো বুঝতেন। আজ আপনি আপনার প্রিয় সেই মাঠ থেকেই বিদায় নিলেন। ওপারে ভালো থাকবেন ভাই। মহান আল্লাহ আপনাকে জান্নাত নসিব করুন, আমিন...।”

দেশের বাইরে থাকা সাকিব লিখেছেন, ‘‘কোচ মাহবুব আলি জাকির বিদায়ে আমি স্তব্ধ ও গভীরভাবে শোকাহত। পেশাদার ক্রিকেটের শুরুর দিনগুলি থেকে তাকে চিনতাম। তার সঙ্গে মেশার প্রিয় স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে। তার শেষ মুহূর্তগুলি ছিল ক্রিকেট মাঠেই, যা করতে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। তার পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা।”

মোস্তাফিজুর রহমানকে এই পর্যায়ে আনতে বড় ভূমিকা রেখেছেন জ‌্যাকি। সেই কথাই স্মরণ করলেন সময়ের অন‌্যতম সেরা বোলার মোস্তাফিজুর, ‘‘পেসার হান্টের মাধ্যমে যখন নির্বাচিত হই, মাহবুব আলি জাকি স্যার ছিলেন আমার প্রথম কোচ। ক্যারিয়ারে অনেকবার তিনি আমাকে সহায়তা করেছেন। জাকি স্যারের চলে যাওয়ার খবর জেনে হৃদয় ভেঙে গেছে।”

তাসকিন আহমেদ ২০১৬ সালে অ‌্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হন। জ‌্যাকির সঙ্গে কাজ করার পরই তাসকিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন দারুণভাবে। তাসকিনও শোকে আচ্ছন্ন, ‘‘হুট করে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা ক্যাপিটালসে আমাদের সহকারী কোচ মাহবুব আলি জাকি আজকে মারা গেছেন। ম্যাচের আগে ক্রিকেটারদের সঙ্গে গা গরম করছিলেন তিনি। শান্তিতে ঘুমান কোচ। তার পরিবার ও পুরো ঢাকা ক্যাপিটালস পরিবারের জন্য গভীর সমবেদনা।”

সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল লিখেছেন, ‘‘জাকি ভাইয়ের আকস্মিক প্রয়াণে গভীর শোকে স্তব্ধ হয়ে আছি। ক্রিকেট মাঠে আমি নিজেও একই রকম ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম, আজও সেই স্মৃতি বুক কাঁপিয়ে তোলে। আল্লাহর অশেষ রহমতে তখন বেঁচে গিয়েছিলাম, কিন্তু জাকি ভাই আমাদের মাঝ থেকে চিরতরে চলে গেলেন। আল্লাহ জাকি ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে এই অসহনীয় বেদনা সহ্য করার শক্তি ও ধৈর্য দান করেন।”

হাসান মাহমুদের শুরুটাও জ‌্যাকির হাত ধরে। প্রিয় স‌্যারকে হারিয়ে হাসান শোকাহত, ‘‘বাংলাদেশের অন্যতম একজন বোলিং কোচ, আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ, যায় হাত ধরে আমার পথচলা, যার কাছ থেকে পেয়েছি ভালো খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন, তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। আল্লাহ উনাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন।”

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাস গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘আমার অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার দিনগুলি থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে। খেলাটির প্রতি তার আবেগ ও নিবেদনের কারণে সবসময়ই তাকে গভীর শ্রদ্ধা করেছি। এই কঠিন সময়ে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সত্যি হৃদয়বিদারক দিন।”

মুশফিকুর রহিম আজ মাঠেই ছিলেন। ম‌্যাচের পর অংশ নিয়েছেন জানাজায়। মরদেহ দেখার পর তার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মুশফিকুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘জ‌্যাকি ভাই আমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দান করুক।’’