হাতে ৭ উইকেট রেখে ৩০ বলে ৩৫ রানের দরকার ছিল সিলেট টাইটান্সের। উইকেটে থিতু হওয়া দুই ব্যাটসম্যান পারভেজ হোসেন ইমন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। নোয়াখালী জয়ের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল। অথচ ১৬তম ওভার থেকে যা হলো তা কল্পনাকেও হার মানাল।
স্পিনার জহির খানকে এক ছক্কা উড়ানোর পর বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন পারভেজ (৬০)। পরের ওভারে আফিফ হোসেন উইকেট বিলিয়ে আসেন রাজার বলে। ১৮তম ওভারে পেসার মেহেদী হাসান রানার হ্যাটট্রিক। একে একে সাজঘরে মেহেদী, নাসুম ও খালেদ। ১৯তম ওভারে পেসার হাসান ৬ রানের বেশি দেননি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য সিলেটের প্রয়োজন ১৩ রান।
নোয়াখালী বল তুলে দেন সাব্বির হোসেনের হাতে। ব্যাটসম্যান ইথান ব্রুকস প্রথম দুই বলে কোনো রানই নিতে পারেননি। প্রবল চাপে পড়ে যান ইংলিশ ব্যাটসম্যান। তৃতীয় বল থেকে শুরু নাটকীয়তা। সাব্বির হাই নো করেন তৃতীয় বলে। ফ্রি হিটে টাইমিং মিলিয়ে ব্রুকস ছক্কা উড়ান মিড উইকেট দিয়ে। চতুর্থ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৪ রান। এবার সমীকরণ ২ বলে ২ রান।
সিলেটের ডাগ আউটে খুশির আনন্দ। মনে হচ্ছিল এবার তারা জিতবে। কিন্তু সমীকরণ পাল্টে যায় পরের মুহূর্তেই। পঞ্চম বল ব্যাট লাগাতে পারেননি ব্রুকস। উল্টো রান আউট হন। সিলেটের ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান সালমান এরশাদ এবার ক্রিজে।
সাব্বির এরপর স্রেফ খলনায়ক। ওয়াইড দিয়ে ম্যাচের সমীকরণ নিয়ে আসেন ১ রানে। এবার ১ বলে দরকার ১ রান। শেষ বলে এরশাদ ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি। দৌড়ে প্রান্ত বদল করেছেন। সাব্বির সরাসরি থ্রোতে উইকেট ভাঙার সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হন। নোয়াখালী রিভিউয়ের আবেদন করেছিল। তাতে কাজ হয়নি।
প্রথম ম্যাচে সিলেট টাইটান্সের ব্যাটসম্যানরা দারুণ পারফর্ম করলেও বোলাররা করেছিলেন হতাশ। তাতে জয় হয়ে যায় হাতছাড়া। জয়ে ফিরতে সময় নেয়নি স্বাগতিক সিলেট। নোয়াখালী এক্সপ্রেসকে ১ উইকেটে হারিয়ে বিপিএলের দ্বাদশ আসরে জয়ের খাতা খুলল তারা।
সিলেটের জয়ের নায়ক পেসার খালেদ আহমেদ। বল হাতে ৪ ওভারে ১ মেডেনে ২৩ রানে ৪ উইকেট নেন। তাতে নোয়াখালীকে ১৪৩ রানে আটকে রাখতে পারে সিলেট। ওই রান তাড়া করতে নেমে পারভেজ হোসেন ইমনের টানা দ্বিতীয় ফিফটিতে (৬০) জবাব দেয় সিলেট। সঙ্গে মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। তবে তারা কেউই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি। চতুর্থ উইকেটে তাদের জুটি থেকে আসে ৮৩ রান।
ম্যাচে চরম নাটকীয়তা ছড়ায় সিলেটের ইনিংসের ১৮তম ওভারে। ১৮ বলে ২৪ রান লাগত সিলেটের। বাঁহাতি পেসার মেহেদী করা ওভারের প্রথম ৩ বলে ৩ রান পান মিরাজ ও ব্রুকস। শেষ বলে ম্যাচের চিত্র পাল্টে যায়। রানার লেগ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁয়ে ক্যাচ দেন মিরাজ। আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় রিভিউ নিয়ে সাফল্য পায় নোয়াখালী। পরের বলে স্লোয়ারে এলবিডব্লিউ হন নাসুম। শেষ বলে লং অনে ক্যাচ তোলেন খালেদ। সাব্বির হোসেন ক্যাচ ধরতেই হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেয়ে যান মেহেদী।
বিপিএলের দ্বিতীয় দিনেই সমর্থকরা পেল প্রথম হ্যাটট্রিকের স্বাদ। এরপর ম্যাচে নখ কামড়ানো প্রতিটি বল, প্রতিটি মুহূর্ত। পেন্ডুলামের মতো ঝুলতে থাকা ম্যাচ কখনো নোয়াখালীর পক্ষে, কখনো সিলেটের। শেষ পর্যন্ত সিলেটের ভাগ্যে লিখা হয় ম্যাচের নাম।
এর আগে, টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে প্রথম বলেই সাফল্য পায় সিলেট। মোহাম্মদ আমিরের করা ইনিংসের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মাজ সাদাকাত। পরের ওভারে বল হাতে পান খালেদ। ম্যাচের মোড়টা ওই ওভারেই ঘুরিয়ে দেন জাতীয় টেস্ট দলের নিয়মিত ক্রিকেটার খালেদ।
দ্বিতীয় বলে হাবিবুর রহমান সোহানকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করান। এরপর পঞ্চম বলে হায়দার আলীকে এলবিডব্লিউ করেন। কোনো রান না দিয়ে জোড়া উইকেট নিয়ে দলকে আনন্দে ভাসান ডানহাতি বোলার। ৯ রানে ৩ উইকেট হারানো নোয়াখালী পাওয়ার প্লেতে তুলতে পারে মাত্র ২৮ রান।
অধিনায়ক সৈকত আলী কিছুটা লড়াই করেছিলেন। কিন্তু হাল ছেড়ে দেন ২৪ রান তুলে। ক্রিজে এসে ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি সাব্বির হোসেনও। দুটো উইকেটই নেন সায়েম আইয়ুব। সেখান থেকে জাকের আলী ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন দলের হাল ধরেন। শুরুটা ধীরস্থির হলেও সময়ের সঙ্গে দ্রুত রান তোলেন তারা। ৩৯ বলে ৬৬ রান করেন জাকের-মাহিদুল।
তাতে বলার মতো স্কোর পায় নোয়াখালী। ইনিংসের শেষ ওভার করতে এসে খালেদ আবারো জোড়া সাফল্য পায়। ১৭ বলে ৪ চারে ২৯ রান করা জাকেরকে আউট করার পর রাজাকেও সাজঘরের পথ দেখান। ইনিংসের শেষ বলে মাহিদুলের ব্যাটে ছক্কা হজম করে শেষ হয় তার বোলিং স্পেল। ৫১ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৬১ রান করেন মাহিদুল। তাদের সেই চেষ্টা, তীব্র লড়াই বিফলে যায় সিলেটের রুদ্ধশ্বাস জয়ে। দিনের প্রথম ম্যাচটা সাদামাটা হলেও দ্বিতীয়টা একেবারে, পয়সা উসুল।