রাজধানীতে তিন দিনব্যাপী চলা আবাসন খাতের অন্যতম বৃহৎ আয়োজন রিহ্যাব আবাসন মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল ওয়ালটনের তৈরি সর্বাধুনিক আবাসন পণ্য।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) মেলার শেষ দিনে ওয়ালটনের স্টলে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। ফ্ল্যাট, প্লট, আবাসন প্রকল্পের সঙ্গে আধুনিক গৃহস্থালি ও আবাসন উপকরণ, ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক পণ্য নির্মাতাদের স্টলগুলোতে দেখা যায় ব্যাপক ভিড়। এর মধ্যে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা যায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেক্ট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের স্টলে।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে জানা যায়, অনেক দর্শনার্থীই এসেছেন কেনাকাটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে। কেউ এসেছেন ভবিষ্যৎ ফ্ল্যাট বা বাড়ির পরিকল্পনা নিয়ে, কেউ আবার ফ্ল্যাট বা বাড়ির আধুনিক ও নিরাপদ আবাসন উপকরণ সম্পর্কে ধারণা নিতে এসেছেন। এই বাস্তবতায় ওয়ালটনের স্টলটি হয়ে ওঠে দর্শনার্থীদের অন্যতম গন্তব্য। স্টলে ঢুকতে ও পণ্য সম্পর্কে জানতে দর্শনার্থীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
আধুনিক আবাসনের পূর্ণাঙ্গ সমাধান এক স্টলে ওয়ালটনের স্টলে সুইচ, বাল্ব, ক্যাবল, ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনার, লিফটসহ আধুনিক আবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য প্রদর্শন করা হয়। বিশেষ করে যারা নতুন ফ্ল্যাট কিনছেন বা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনায় আছেন, তাদের জন্য ওয়ালটনের স্টলটি ছিল এক ধরনের ‘ওয়ান স্টপ সল্যুশন’।
স্টলে প্রবেশ করতেই একপাশে চোখে পড়ে আধুনিক ডিজাইনের স্মার্ট সুইচ ও সকেট, অন্যদিকটা ছিল আধুনিক লিফট দিয়ে সাজানো। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এলইডি বাল্ব ও সুইচের বিভিন্ন মডেল দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। অনেকেই হাতে নিয়ে বাল্বের আলো, উজ্জ্বলতা ও বিদ্যুৎ খরচ, সুইচের গুনগত মান সম্পর্কে জানতে চান। ওয়ালটনের কর্মকর্তারা সহজ ভাষায় পণ্যের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা তুলে ধরেন।
সাভার থেকে মেলায় আসেন উজ্জল ভূইয়া। তিনি বলেন, “নতুন ফ্ল্যাট নিচ্ছি। আগে বিদেশি ব্র্যান্ডের কথা ভাবছিলাম কিন্তু ওয়ালটনের পণ্য দেখে বুঝলাম, দেশীয় পণ্যও এখন আন্তর্জাতিক মানের পাওয়া যায়। এখানে যে প্রিমিয়াম সুইচ দেখলাম, সেগুলোতে স্ক্রাচ পড়ে না, ফেটে যায় না। ওয়ালটনের পণ্যের মান দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম ফ্ল্যাটে এসব সুইচ ব্যবহার করব।”
সুইচ, বাল্ব ও ফ্যান সম্পর্কে ওয়ালটনের লাইটিং, ফ্যান ও সুইজ বিভাগের সিনিয়র ব্যান্ড ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান বলেন, “ওয়ালটনের সুইচগুলো উন্নত ম্যাটেরিয়াল, পলিকার্বনেট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি। ক্রিস্টাল সিরিজের প্রিমিয়াম সুইচে ব্যবহার করা হয়েছে টেম্পার গ্লাস, যা স্ক্রাচ প্রুফ। এসব সুইচ ফাটে না। ফ্যানগুলো বিএলডিসি টেকনোলজির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, যা বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও নিরাপদ।”
“ওয়ালটন গুণগত মানের সার্কিট ব্রেকার উৎপাদন করে। মোট কথা বিল্ডিং বা ফ্ল্যাট বানানোর ইলেক্টনিক সব গুণগত পণ্যই তৈরি করছে ওয়ালটন। সর্ব প্রযুক্তির এসব পণ্য শতভাগ নিরাপদ,” যোগ করেন মাহমুদুল হাসান। লিফট ও বৈদ্যুতিক ক্যাবলে পেশাজীবীদের আগ্রহ মেলায় আসা অনেক ডেভেলপার, প্রকৌশলী ও নির্মাণসংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের ওয়ালটনের লিফট ও বৈদ্যুতিক ক্যাবলে বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, স্মুথ অপারেশন, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং বিক্রয়োত্তর সেবার বিষয়গুলো সম্পর্কে তারা বিস্তারিত জানতে চান। ওয়ালটনের স্টলে প্রদর্শিত লিফটের বিষয়ে কর্মকর্তারা দর্শনার্থীদের আধুনিক কন্ট্রোল সিস্টেম, জরুরি পরিস্থিতিতে স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্সের বিষয়টি তুলে ধরেন। এতে অনেক ডেভেলপারই আগ্রহ প্রকাশ করে ভবিষ্যৎ প্রকল্পে ওয়ালটনের লিফট ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
মেলায় ওয়ালটনের স্টলে কথা হয় ওয়ালটন ইলেক্ট্রনিক্সের কোয়ালিটি বিভাগের কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “ক্যাবলের দুটি মূল উপাদান। এর মধ্যে একটি হলো কপার। ওয়ালটনের ক্যাবলের কপার শতভাগ নিরাপদ, এলএমই সার্টিফায়েড। এফআর পিভিসি ক্যাবলে আগুন লাগলেও তা ছড়াবে না। ওয়ালটনের যেকোনো ক্যাবল কাস্টমাইজ করে নেওয়ার সুবিধা রয়েছে গ্রাহকদের জন্য।”
লিফট সম্পর্কে ওয়ালটনের করপোরেট সেলস এক্সিকিউটিভ লিপুন হাওলাদার অনিক বলেন, “ওয়ালটন দুই ধরনের লিফট ক্রেতাদের সরবরাহ করে। এর মধ্যে একটি প্যাসেঞ্জার লিফট, অন্যটি কার্গো লিফট। বিল্ড ইন ইউপিএস সিস্টেমের ওয়ালটন লিফগুলো ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডের। লিফটগুলোতে রয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স সুবিধা। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে এসব লিফট নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী গুণগত মানের লিফট কাস্টমাইজ করে দিতে পারে ওয়ালটন।”
মেলায় ওয়ালটনের স্টলে কথা হয় ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েতে হোসেনের সঙ্গে। তিনি একটি আবসান কোম্পানিতে চাকরি করেন। কোম্পানির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেলায়ত হোসেন বলেন, “একই জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক পণ্য দেখে বাড়ি বানানোর উপকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। আমরা এতদিন জানতাম ওয়ালটনের রেফ্রিজারেটর নিয়েই গ্রাহকরা সন্তুষ্ট। এবার মনে হচ্ছে, বাড়ি বানানোর উপকরণগুলো টেকসই হলে গ্রাহকরা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মতো ওয়ালটনকে কাছে পাবে।”
দেশি ব্র্যান্ডে আস্থা বাড়ছে
রিহ্যাব মেলায় ওয়ালটনের স্টলে উপচে পড়া ভিড় প্রমাণ করে, দেশীয় ব্র্যান্ডের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা দিন দিন বাড়ছে। একসময় আবাসন উপকরণে বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকলেও এখন মান, দাম ও সেবার দিক থেকে দেশীয় ব্র্যান্ডের পণ্য অনেকটাই সমানতালে প্রতিযোগিতা করছে।
ওয়ালটনের কর্মকর্তারা জানান, দেশের মানুষের চাহিদা ও বাস্তবতা বিবেচনা করে পণ্য তৈরি করছে ওয়ালটন। ফলে পণ্যগুলো সাশ্রয়ী, টেকসই এবং সহজলভ্য হচ্ছে। মেলায় ওয়ালটনের স্টলে দর্শনার্থীদের আগ্রহ সেই প্রচেষ্টার স্বীকৃতি।